" " "
"
চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিভাগদর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডসমুদ্র

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত (Guliakhali Sea Beach) যেভাবে যাবেন, যেখানে থাকবেন বিস্তারিত তথ্য জানুন!

Guliakhali Sea Beach : আমাদের আজকের এই ট্যুরিস্ট গাইডলাইনটি তাদের জন্যই, যারা কিনা সমুদ্র সৈকতের প্রেমে আগে থেকেই হাবুডুবু খাচ্ছেন। যাদের সমুদ্র সৈকতের প্রতি মারাত্মক পরিমাণ আগ্রহ এবং ভালোবাসা কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত হতে পারে পার্ফেক্ট চয়েজ।

কেননা মন ভালো করে দেওয়া কিংবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবার প্রয়োজনে এই গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত আপনাকে এতোটুকু আশাহত করবে না। সুতরাং চলুন তবে এবার এই পর্যটন এলাকাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

" " "
"

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত – Guliakhali Sea Beach

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত পরিচিতি

শুরুতেই গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত পরিচিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটি মূলত নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। যেটিকে অনেকেই মুরাদপুর বীচ নামেও চিনে থাকেন। সাধারণত সমুদ্র মানেই পাখি, ঢেউ আর বাতাসের মিতালী একসাথে উপভোগ করার অনন্য স্থান। সেদিক দিয়ে সমুদ্র হিসেবে এই স্থানটি পরিচিতি পাওয়ার প্রায় প্রতিটি শর্তই পূরণ করতে পেরেছে। 

যদিও গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত গঠনগত দিক দিয়ে কোনোভাবেই অন্যান্য সমুদ্র সৈকতগুলির সাথে যায় না। অর্থ্যাৎ গঠনগত দিক দিয়ে পুরোপুরি আলাদা এই বীচ বা সমুদ্র সৈকত! এ-কারণেই মূলত পর্যটকদের বাড়তি আগ্রহ কাজ করে স্থানটির প্রতি। সমুদ্রেরর এক ভিন্ন স্বাদ পেতে জীবনে একটিবারের জন্যে হলেও গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ঘুরে আসা প্রয়োজন! 

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত (Guliakhali Sea Beach) এর অবস্থান 

এটি মূলত চট্টগ্রামের একটি ভিন্নধর্মী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে Guliakhali Sea Beach এর অবস্থান। পরিচিতির দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকার কারণে এই সমুদ্র সৈকতে নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগ করতে খুব একটা সমস্যা হবে না। যদিও গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ক্ষেত্রে মূলত চট্টগ্রামের পর্যটকদের সংখ্যায় বেশি। 

Guliakhali Sea Beach এর পুরোনো গল্প

সৈকতটি প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছিলো একটা সময়। তবে ঠিক কোন সময়ে এই সৈকতটি পুরোপুরিভাবে আজকের এই অবস্থা পর্যন্ত এসেছে সে-সম্পর্কে কেউই কোনো তথ্য দিতে পারেনি। পাশাপাশি এই গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে সে-সময় কেউই খুব একটা জানতো না। যার ফলে তখনো স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবে সাধারণ স্বীকৃতি পায়নি। 

পরবর্তীতে সময় গড়াতে গড়াতে ২০১৪ সালের দিকে এউ সৈকত সম্পর্কে সকলে জানতে শুরু করে৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলো চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র। যারা কিনা এই সমুদ্র সৈকতের অনন্য কিছু ছবি মজার ছলে ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন৷ পরবর্তীতে এসব ছবি অসম্ভব ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কারণেই ধীরে ধীরে সাধারণ জনগন সমুদ্র সৈকতটি সম্পর্কে জানতে শুরু করে৷ 

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য 

Guliakhali Sea Beach এর সৌন্দর্য এর ব্যাপারে একেবারে না বললেই নয়! এর সৌন্দর্যই প্রমাণ করে প্রকৃতি ঠিক কতটা মানসিক প্রশান্তি দিতে পারছে আমাদের! বিশেষ করে প্রকৃতির এই অনন্য সৌন্দর্যের বেলায় তো বলার মতো কিছুই নেই! শারীরিক এবং মানসিক স্বস্তির ক্ষেত্রে আর কিসেরই বা প্রয়োজন! 

বলে রাখা ভালো এই সৈকতে কিন্তু সাগরের মতো অতটা ঢেউ বা গর্জন নেই। পুরো সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচার বিস্তীর্ণ ঘাস থাকায় অনেকেরই এটিকে সমুদ্র সৈকত কিংবা বীচ বলতে কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে। কেননা বীচ কিংবা সমুদ্র সৈকতের মতো গঠনগত দিক দিয়ে বেশ ভিন্নতা চোখে পড়বে স্থানটির। 

সেই যাই হোক! এই সবুজ গালিচার মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া সরু নালাগুলির রয়েছে নিজস্ব ক্ষমতা। যা পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে সক্ষম! এই নালাগুলিতে মোটামুটি সবসময়ই পানি থাকে। তবে যখনই জোয়ারের সময় শুরু হয়ে যায় ঠিক তখনই সমস্ত নালা পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠে এবং দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। 

গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে যারা যাবেন তারা কিন্তু প্লাস পয়েন্টও পেতে পারেন। বলছিলাম এই সৈকতের আশপাশে থাকা ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ বনের কথা। এসব মিনি বন আপনাকে সবুজের সমারোহ দেখতে সাহায্য করবে৷ আবার এসব বনের মাঝ দিয়েই বয়ে চলেছে বেশ কয়েকটি খাল। যা দেখে মনে হবে রূপকথার কোনো গভীর বন আপনার চোখের সামনে ধরা দিয়েছে। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাবেন, রাতে কোথায় থাকবেন এবং কোথায় খাবেন বিস্তারিত তথ্য জানুন!

এই গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিরিবিলি পরিবেশে নিজের সাথে কিংবা প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো। অনেক পর্যটন এলাকা যথেষ্ট উন্নত এবং সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও দেখা যায় পর্যটকের ভীড়ে একাকী সময় কাটানো সম্ভব হয় না। এদিক দিয়ে কিন্তু গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের জুড়ি মেলা ভার। 

নিরিবিলি পরিবেশের পাশাপাশি যদি উপরের আকাশে উড়ে যাওয়া পাখি, পাশে থাকা সবুজের সমারোহ উপভোগ করা যায় তবে ক্ষতি কি! মূলত Guliakhali sea Beach নামক এই পর্যটন এলাকাটির মর্ম তারাই বুঝবেন যাদের একাকী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পরিবেশ বেশ ভালো লাগে তারা! 

আবার আপনার যদি সমুদ্রে নেমে নিজেকে হারানোর ইচ্ছে থাকে তবে সেটিও সম্ভব। যদিও তা কিছুটা ভিন্নভাবেই করতে হবে। যারা সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে চান, ঠিক নিজের মতো করে তারা জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। তবে এসব নৌকায় চড়ার আগে ভাড়া সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিবেন। জানা না থাকলে চালকের সাথে আলোচনা করে ভাড়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিবেন৷ 

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে যেভাবে যাবেন

এবার আসি গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে কিভাবে যাবেন সে-সম্পর্কে। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে শুরুতেই আপনাকে পৌঁছাতে হবে চট্টগ্রামে। ঢাকা কিংবা অন্যান্য জেলা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে বাসযাত্রায় মূলত ৪৮০-১২৫০ টাকার মতো লাগতে পারে। চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে নেমে সেখান থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার বাস ও টেক্সি করে পৌঁছে যাবেন সীতাকুণ্ড। এবার সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী বিচের বাঁধ পর্যন্ত ৩০/- থেকে ১৫০/- টাকাতে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে। 

Guliakhali sea Beach Location :

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে যেখানে অবস্থান করবেন

ভ্রমণে নিয়ে ক’দিন থাকতে না পারলে কি হয়? বিশেষ করে যারা বহুদূর থেকে ভ্রমণ করতে আসেন তাদেরও উপভোগের একটা ব্যাপার আছে। এক্ষেত্রে যারা দূর করতে আসবেন তারা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি কোনো হোটেলে উঠতে পারেন। তবে সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হলো সৈকতের আশেপাশে এখনো কোনো ভালো হোটেলের ব্যবস্থা হয়নি। তবে আপনি চাইলে সরাসরি চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে পারেন। হোটেল রিজেন্ট পার্ক, হোটেল হেরিটেজ, হোটেল হক টাওয়ার ইত্যাদি হোটেল রাত কাটানোর জন্য বেস্ট অপশন হতে পারে। 

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করবেন

খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারের সাথে ভ্রমণের একটু সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের কাজ হলো ব্যাক্তির মন এবং পেট দু’টোই তুষ্ট করা। অন্যান্য জেলার মানুষেরা যারা চট্টগ্রাম মাঝেমধ্যে যান কিংবা নতুন যাচ্ছেন তারা চাটগাঁইয়া খাবার টেস্ট করতে পারেন। আর যারা চট্টগ্রামের মানুষ তারাও চাইলে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা লোকাল ফুড শপ থেকে খাবার কালেক্ট করে নিতে পারেন। যদিও গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এলাকায় কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা ফুড শপের ব্যবস্থায়। সুতরাং লজিক্যালি আপনাকে খাবার নিয়ে যেতে হবে কিংবা সীতাকুণ্ড বাজার থেকে আনিয়ে নিতে হবে। 

Guliakhali Sea Beach ভ্রমণ টিপস

আপনার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণকে আরো সুন্দর এবং প্রানবন্ত করে তুলতে আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই অংশটি। যেখানে আমরা শেয়ার করবো গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ সম্পর্কিত বেশকিছু ভ্রমণ টিপস। যা আসলেই হয়তো আপনার দরকারে আসতে পারে! 

  • সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে যাবেন
  • নৌকায় একা উঠার চেষ্টা না করাই ভালো
  • শিশুদের একা ছাড়বেন না
  • বনে ঘুরে বেড়ানোর সময় সাবধানে চলাফেরা করবেন
  • বীচের যেখানে-সেখানে কোনোধরণের ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না

ইতি কথা

Guliakhali sea Beach যাদের এখনো উপভোগ করা হয়নি তারা আজই প্ল্যানিং করে ফেলুন। এতো সুন্দর স্থান এবং পরিবেশ উপভোগ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখলে নিজেকেই বড্ডভাবে ঠকানো হবে! আর হ্যাঁ! আমাদের আজকের এই আয়োজন কেমন লেগেছে তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! ধন্যবাদ সবাইকে!

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *