" " "
"
চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিভাগদর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডসমুদ্র

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাবেন, রাতে কোথায় থাকবেন এবং কোথায় খাবেন বিস্তারিত তথ্য জানুন!

Potenga Sea Beach : সমুদ্র বিলাস এর কথা মনে হতেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর কথা মনে আসাটাই স্বাভাবিক।  পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত মূলত বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকতের মধ্যে অন্যতম একটি। সমুদ্র সৈকতের কথা মনে আসতেই  মন চায় সমুদ্রের উপর থেকে ভেসে ভেসে দূরদূরান্ত পৌঁছে  যেতে। 

সমুদ্রে  কলকাকলি মুখর পরিবেশ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন যেন সমান তালে নিজের চোখ এবং কানকে ঝলসাতে থাকে। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হতে থাকে আমাদের ভ্রমণপিপাসু হৃদয়।  মন যেন আর কিছুতেই মানতে চায়না নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।

" " "
"

তখন হাজারটা প্রশ্ন মনের ভেতরে  আসতে শুরু করে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে আমরা আমরা কি করব?  কিভাবে যাব?  কতটা সময় লাগতে পারে?  আসলে কি কি খাবার পাওয়া যায় সেখানে?  এমন হাজারটা প্রশ্ন মনের গহীন থেকে বাজতে শুরু করে।

আনন্দের বিষয় এই যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আজকে আমরা করতে চলেছি।  তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করি। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত – Potenga Sea Beach

উৎপত্তিস্থল

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত ভারতের মিজোরামের  লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছে।  এটি মূলত কর্ণফুলী নদী এবং রাঙ্গামাটি হয়ে  চট্টগ্রামের মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগরে এসে পড়েছে।  দুঃখের বিষয় এই যে,  ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এই সমুদ্র সৈকতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।  

কিন্তু, এই Potenga Sea Beach এর সংস্করণ এর জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন ভাবে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।  সমুদ্রের ঢেউয়ে পাড় ভাঙ্গন  ঠেকাতে বড় বড় পাথর এবং বিভিন্ন কংক্রিটের দেয়াল এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের নগরবাসীরা যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে এবং উৎসবে এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে আসেন।  

শুধু তাই নয় দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর অপরূপ দৃশ্য অবলোকনের জন্য ছুটে আসেন।  কারণ এই সৌন্দর্য শুধু মানুষকে আনন্দই দেয় না মানুষের মনকে বিভিন্ন ভাবে বিকশিত করে।

পরিকল্পনাঃ  কি কি করবেন পতঙ্গ  সমুদ্র সৈকতে গিয়ে?

সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এ অনেক মানুষের সমাগম দেখা যায়।  সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন ধরনের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।  চলুন একটু অল্প পরিসরে জেনে নেইঃ 

  •  পানিতে নেমে স্নিগ্ধ পরিবেশে নিজের শরীরকে ভিজাতে পারেন।
  •  বিকালে  গোধূলি লগনে সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে নিজের মনকে আরো অনেক বেশি প্রশান্ত করতে পারেন।
  • সমুদ্রের পাড়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে যেমন ঘোড়ায় করে ঘুরতে পারেন বা সি বাইক এও চড়তে পারেন।
  • আপনি চাইলে এখানে স্পিড বোটে চড়ে ও সমুদ্রের উপরে ভেসে বেড়াতে পারেন।
  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে খুবই অল্প খরচে আপনি আপনার মজার খাবারটি উপভোগ করতে পারেন। 
  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর পাশেই একটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে যেখানে আপনি ১০০ প্রকারের প্রজাপতি দেখা পাবেন।  তাই এটি উপভোগ করতে ভুলবেন না।
  • Potenga Sea Beach এর পাশে রয়েছে শাহ আমানত বিমানবন্দর এবং আরও রয়েছে নৌবাহিনীর ঘাঁটি। আপনি চাইলে খুব সহজেই অল্প সময়ে এই সুন্দর স্থানগুলো পরিদর্শন করে আসতে পারবেন। 

সমুদ্রে ভেজার পর এখানে মানসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়নের কারণে আপনি বেশ সন্ধ্যা অব্দি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ অবস্থান করতে পারেন। 

কিভাবে পতেঙ্গা সৈকত যাবেন?

সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে আপনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যেতে পারেন।  তবে সৈকত পরিদর্শনের জন্য আপনাকে অবশ্যই  চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছাতে হবে। এ

চট্টগ্রামে পৌঁছানোর জন্য আপনি বাস-ট্রেন বা বিমান যে কোন পরিবহন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর আপনি বিভিন্নভাবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে পারবেন। 

চলুন অল্প-পরিসরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ কিভাবে পৌঁছাবেন সে সম্পর্কে একটি ধারণা নেয়া যাক।

Potenga Sea Beach Location

বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে চট্টগ্রাম কিভাবে পৌঁছাবেন?

বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।  আপনি যে কোন জেলা থেকে চট্টগ্রামে যাবার জন্য আপনার সুবিধামতো কম খরচে বা আরো ভালো পরিবহন ব্যবস্থায় একটু বেশি খরচ করে সহজেই বুঝে যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিভাবে পৌঁছাবেন?

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর অনেক সুগম পথ রয়েছে।  আপনি চাইলেই আকাশপথে,  ট্রেনে,  বা বাসে করেই খুব সহজে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারবেন।  ঢাকা সায়দাবাদ থেকে আপনি বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন এসি  এবং নন এসি বাসে করে  চট্টগ্রামে যেতে পারেন।

  •  সৌদিয়া পরিবহন
  •  টি আর ট্রাভেলস
  •  হানিফ এন্টারপ্রাইজ
  •  শ্যামলী পরিবহন
  •  মডার্ন লাইন
  •  গ্রীন লাইন সার্ভিস

সার্ভিস এবং বাসের মান অনুযায়ী প্রতি ভাড়া ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।  অর্থাৎ, আপনি আপনার সাধ্য অনুযায়ী আপনার পছন্দের সিটটি গ্রহণ করতে পারেন।

যদি আপনি রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে চান তাহলে বিভিন্ন ট্রেনের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে যেমনঃ

  •  সুবর্ণ এক্সপ্রেস
  •  সোনার বাংলা
  •  মহানগর প্রভাতী
  •  তৃণা নিশীথা

বাস এবং ট্রেন সার্ভিসের পাশাপাশি আপনি বিমান সার্ভিস সরাসরি  ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে অল্প সময়ে পৌছাতে পারেন।

চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিভাবে পৌঁছাবেন?

চট্টগ্রাম শহর থেকে আপনি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ বিভিন্ন ভাবে যেতে পারেন। আপনি চাইলে সমুদ্রসৈকতে সিএনজি অথবা বাসে করে চলে যেতে পারেন।  আর নিজস্বতা গাড়ি থাকলে তো কোন কথা নেই। 

মূলত চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত মাত্র 14 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।  একটি সিএনজি ভাড়া করে অথবা আপনি বাসায় চলে যেতে পারেন অনায়াসে।  একটি সিএনজি আপনার কাছ থেকে ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিতে পারে।  

তবে আপনি যদি  বাসে যেতে পারেন তাহলে অনেক কম খরচে চলে যেতে পারবেন আশা করা যায়। সুতরাং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত অবলোকন করার জন্য আপনার যানবাহন নিয়ে কোন চিন্তাই করতে হবে না।

রাতে কোথায় থাকবেন এবং কোথায় খাবেন?

সত্যি কথা বলতে গেলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য অবলোকন করার পর সব থেকে ভালো কাজ হবে যদি আপনি চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন।  
Patenga Sea Beach Hotel : চট্টগ্রাম শহরে আপনি ছোট-বড় আপনার প্রয়োজন মত কম খরচে এবং বেশি খরচের মধ্যে অনেক ভালো ভালো  হোটেল পেয়ে যাবেন যেখানে আপনার নিরাপত্তাও নিশ্চিত থাকবে। চট্টগ্রামের শহর এলাকায় আপনি যদি একা থাকতে চান তাহলে মাত্র ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই আপনি একটি ভাল রুম পেয়ে যাবেন।

Potenga Sea Beach এর কাছে তেমন কোন ভাল এবং অল্প খরচের  হোটেলের ব্যবস্থা নেই।  আর আপনার যদি খুব ইচ্ছে করে যে আপনি সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি  কোথায় থাকবেন তাহলে এখানে একটি মাত্র রিসোর্ট পার্ক আছে যেখানে আপনি রাতে থাকতে পারেন।  এই  রিসোর্টটিতে থাকতে হলে আপনাকে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকার মতো খরচ করতে হতে পারে।

এছাড়া আপনি যদি অনেক মানসম্মত এবং বিলাসবহুল আবাসিক হোটেলে থাকতে চান তাহলে আপনি বেছে নিতে পারেন হোটেল রেডিসন ব্লুলে।  তবে কি হোটেলে থাকতে হলে আপনাকে আপনার বাজেটের পরিমাণ বাড়াতে হবে।  হোটেল রেডিসনে এক রাত থাকার জন্য আপনাকে ১৮ হাজার টাকা খরচ করতে হতে পারে। 

এখন ভাবছেন কোথায় খাবেন?  সমুদ্র সৈকতের পাশে আপনি অনেক ধরনের  সুস্বাদু স্ট্রিটফুড পেয়ে যাবেন যা আপনাকে সাময়িকভাবে ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও  গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো আপনি উপভোগ করতে পারেন।  

আর সেজন্য আপনাকে চলে যেতে হবে চকবাজারের মেজবানি হোটেলে এবং বিভিন্ন কফি শপ, মানসম্মত রেস্টুরেন্ট এ।  এর পাশাপাশি আপনি যে হোটেলগুলোতে রাতের থাকবেন সেখানেও টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মানসম্মত এবং আপনার পছন্দের মতো সুস্বাদু খাবার পেয়ে যাবেন।

আশা করছি আপনি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ বেড়াতে যাওয়ার সময় রাত্রি যাপনের ব্যাপারে  এবং খাবারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পেরেছেন।

পরিশেষ মন্তব্য

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য অবলোকন এর অনন্য সৃষ্টি। এটি যেন সৃষ্টিকর্তার নিজের সৃষ্টির  অপরূপ নিদর্শন।  সবথেকে ভালো হবে যদি আপনি শীতকালে এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য চলে আসেন।  তো আর দেরি কেন?  ঝটপট তৈরি করে ফেলুন এই অনন্য প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য একটি পরিকল্পনা।

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *