চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিভাগদর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

চট্টগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান (Chittagong Tourist Spot) সমূহের তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!

প্রাচ্যের রাণী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম শহর। বলা হয়ে থাকে প্রাচ্যের রাণী ‘চট্টগ্রাম ঘুরে দেখলে অভিভক্ত বাংলাকে প্রায় দেখা হয়েই যায়’। এই কথাটি সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। বৃহত্তর চট্টগ্রামে গেলে আপনার মনে হবে আপনি কোন পর্যটনে স্পট কে রেখে কোন পর্যটন স্পটে যাবেন! গৎবাঁধা যান্ত্রিক জীবন আর ইট-পাথর-লোহার খাঁচা ছেড়ে চলুন আজ স্বস্তি ও মনের প্রশান্তির খোঁজে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সমূহ দেখে আসি।  

চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান – Chittagong Tourist Spot

চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হল

  • গুলিয়াখালী
  • সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক।
  • ভাটিয়ারী গলফ কোর্স এবং লেক।
  • মিরসরাই মহামায়া লেক।
  • কালুর ঘাট মিনি বাংলাদেশ।
  • ওয়ার সিমেন্ট্রি।
  • পতেঙ্গা সৈকত এবং নেভাল সৈকত।
  • পার্কি সৈকত।

চলুন এক এক করে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে জেনে নিই। 

গুলিয়াখালী সী-বিচ

গঠনগত দিক দিয়ে গুলিয়াখালী অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই সৈকতের পূর্ব দিকে থাকালে দেখা মেলে পাহাড়ের আর পশ্চিম দিকে দিগন্ত জোড়া জলরাশি। গুলিয়াখালীতে কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে দেখবেন কেওড়া গাছের শ্বাসমূল। এই বন সমুদ্রের অনেকটা গভীরে চলে গেছে। এই সী-বিচের পরিবেশ দেখতে সোয়াম্প ফরেস্ট এবং সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনের মতো। এখানকার সৈকত জুড়ে দেখতে পাবেন সবুজ গালিচার বিস্তীর্ণ ঘাস।  এই সবুজের মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে গেছে সরু অনেক গুলো নালা। জোয়ারের সময় এই নালাগুলো পানিতে একদম ভরে উঠে। পাখি, ঢেউ আর বাতাসের মিতালীর অনন্য অবস্থান দেখা যায় গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে। জোয়ারের সময় সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্য যেন অন্য রকমের এক অনুভূতি। গুলিয়াখালীর সবচেয়ে সৌন্দর্য্যমন্ডিত বিষয় হলো কেওড়াবন। কেওড়াবনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারপাশে কেওড়াগাছের শ্বাসমূল গুলো আপনাকে সুন্দরবনের কথা মনে করিয়ে দিবে।

গুলিয়াখালী যাওয়ার জন্য শুরুতে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড। সীতাকুন্ডের বাস স্ট্যান্ড ব্রিজের নিচ থেকে সরাসরি গুলিয়াখালী ৩০-৪০ টাকা নিবে। গুলিয়াখালী সী-বিচের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং ইকোপার্কের সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামের দুটি ঝরনা চাইলে দেখে আসতে পারেন। তাছাড়া ও গুলিয়াখালীর খুবই কাছে বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। গুলিয়াখালী তে রাতে না থাকাই শ্রেয়। যেহেতু এখানে কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই তাই এখানে না থাকায় ভাল। আর রাতে সৈকতটি নিরাপদ নয়। আর হ্যা সাঁতার না জানলে এই সৈকতে বেশি দূরে যাবেন না।

খৈয়াছড়া এবং নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা

মূলত খৈয়াছড়া এবং নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে মিরসরাই। মিরসরাই বাজারের কাছেই লেগুনা পাবেন সেগুলো করে যাওয়া যাবে খৈয়াছড়া। লেগুনা থেকে নেমে একটু ভেতরে কিছু সিএনজি দেখতে পাবেন। সেই সিএনজি গুলো আপনাকে ঝর্নার আরো কাছাকাছি নিয়ে যাবে। এরপর হাঁটা শুরু করুন। হাঁটার পথ শুরু হবে গ্রামের অনেকটা ভেতরে। আঁকাবাঁকা মেঠো পথের স্বাদ পেয়ে যাবেন ঝর্নায় পৌঁছানোর আগে। আধা ঘন্টার খুব বেশি লাগবে না খৈয়াছড়া ঝর্ণার দেখা পেতে। খৈয়াছড়ার প্রথম দর্শন আপনাকে একরাশ মুগ্ধতা দিবে। সেই অনুভূতি কাটিয়ে জলদি পানিতে নেমে পড়ুন। সাতটি মনোমুগ্ধকর ধাপ আছে এই ঝর্নায়। এই ধাপগুলোর যতোগুলো দেখতে চান, পাহাড় বেয়ে উঠতে পারেন তত ধাপ। 

খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখা হয়ে গেলে এবার দেখে আসা যাক নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য খৈয়াছড়া থেকে প্রথমে আসবেন নয়দুয়ারী। নয়দুয়ারী লেগুনায় করে আসতে পারেন। লেগুনা থেকে নেমেই গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করবেন। নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার এই ট্রেইলটা দারুণ। পাহাড়ে চড়া, ঝিরির স্রোত ঠেলে এগিয়ে যাওয়া সবকিছুর স্বাদ পাইয়ে দেবে এই ট্রেইলে। চারটি ঝর্ণা মিলবে এই ট্রেইলে। ঝর্ণা গুলো হচ্ছে টিপরাখুম, কুপিকাটাখুম, নাপিত্তাছড়া আর বাঘবিয়ানী। খেয়াল রাখবেন, চারটা ঝর্না সময় নিয়ে ভালো মতন ঘুরতে চাইলে আপনাকে রওনা দিতে হবে খুব ভোরে। ঝিরির স্রোতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে খুব, মন চাইবে ঝর্ণায় গা ডুবিয়ে সময় ভুলে যেতে কিন্তু তা তো করলে হবে না ফেরার জন্য যে তাড়া থাকা চাই।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সৈকতগুলোর মধ্যে একটি। এই সৈকত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম আকর্ষণ । ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সৈকত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। সাগরের বালুবেলায় কিছুটা সময় কাটানো আর সূর্যাস্তের বর্ণনাতীত সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান এর অন্যতম এই টুরিস্ট স্পটে। স্পিডবোট করে সাগরে ঘুরে বেড়ানো, সী-বাইকিং, ঘোড়ায় চড়ার মত আরো অনেক সুযোগ আছে এই সি-বিচে।

তাছাড়া ও বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক খাবারের দোকান বিশেষ করে সামুদ্রিক কাকড়ার দোকানের তো এখানে অভাব নেই! সাগরের বালুবেলা থেকে প্রথমেই পতেঙ্গা সী বীচ থেকে সূর্যোদয় এবং অপরুপ সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া ও  দূরে দেখা যাওয়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজসহ চট্টগ্রাম বন্দরের সারি সারি জাহাজ।  পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর অবস্থান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মূল শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। 

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত

অসহ্য গরমের সময় নাগরিক কোলাহল থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের জলে পা ভেজাতে কার না ভাল লাগবে! আর তা যদি হয় সমুদ্রের উপরেই পা রেখে হাঁটার সুযোগ তাহলে  তো আর কথাই নেই। এই অনন্য অভিজ্ঞতা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে মনোমুগ্ধকর বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এর অবস্থান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায়। সীতাকুন্ড পর্যটন এবং ঐতিহ্যে ভরপুর। বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত এই নৈসর্গিক সীতাকুণ্ড। চট্টগ্রামের আর কোথাও না গিয়ে শুধু সীতাকুন্ডে গেলে দেখতে পাবেন গুলিয়াখালী সী-বিচ, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সহস্রধারা ও সুপ্তধারা ঝরনা সহ আরো কত কি? 

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যুক্ত হওয়া একটি পর্যটন স্থান। সমুদ্রের ঢেউ এর সাথে ঝাউ বাগানের সবুজ প্রকৃতি নিয়ে এক নির্মল পরিবেশ তৈরি করেছে এই স্থানে। সমুদ্রের বুক চিড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে থাকা সরু লোহার ব্রিজ ভ্রমণ পিপাসু এবং প্রকৃতি প্রেমীদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করছে। এখানকার মূল আকর্ষণ হল প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি লম্বা এই জেটি পথ বা ব্রিজ। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত জনপ্রিয় একটি পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই লোহার ব্রিজ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পায়ে যখন পানির ঝাপটা এসে লাগবে তখন এক অন্যরকম ভাল লাগা তৈরি করবে।

বিচে ঢুকতেই চোখে পড়বে একচিলতে খেজুর বাগান আর অন্যপাশে বড় বড় সামুদ্রিক নোঙর করা ট্রলার। সকাল বা দুপুরের দিকে গেলে বিচে জোয়ার পাবেন, আর বিকেলে ভাঁটা। বিকালে বিশাল বিচে চাইলে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াতে পারবেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে একটি ছোট্ট বাজারের নাম বাঁশবাড়িয়া বাজার। এই বাজারের মধ্য দিয়ে সরু পিচ ঢালা পথে মাত্র ১০-১৫ ১৫ মিনিট হাটলে পৌঁছানো যায় এই সমুদ্রে উপকূলে। 

ওয়ার সিমেট্রি – চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান

কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রাম হচ্ছে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের একটি সৌধ যা পরিচিত চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি নামে। এই সিমেট্রির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই প্রথম চোখে পড়বে সমাধিস্থলের মাঝখান বরাবর একটি দৃষ্টিনন্দন ক্রশ চিহ্নিত বেদি। মুলত বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এই সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সূচনালগ্নে এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রায় ৪০০টি সমাধি ছিলো। তবে বর্তমানে এখানে ৭৩১টি সমাধি বিদ্যমান। তবে এর মধ্যে ১৭টি সমাধি অজানা ব্যক্তির। বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান (Bandarban Tourist Spot) সমূহের তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!

মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই যুদ্ধ সমাধিতে প্রায় চল্লিশ রকম বৃক্ষর রয়েছে। তাছাড়া ও রয়েছে আরো কয়েক শতা দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ। পাহাড়ের ভাঁজে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাধিস্থল দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে ভিড় করেন। 
বৃহত্তর চট্টগ্রামের দর্শনীয়স্থান গুলোর মাধ্যে মাত্র কয়েকটি দর্শনীয় স্থান এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।  চট্টগ্রামে থাকা কয়েকশত দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে এই ছোট্ট ব্লগে উল্লেখ করা কখনোই সম্ভব নয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *