" " "
"
দর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডরাজশাহীরাজশাহী বিভাগ

রাজশাহীর জেলার দর্শনীয় স্থান (Rajshahi Tourist Spot) সমূহের তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান কি কি : দুষণমুক্ত শহর আর নির্মল পরিবেশের জন্য রাজশাহীর পরিচিতি আজ বিশ্বজোড়া। রাজশাহী শহর একই সাথে বিভিন্ন নামে পরিচিত, রেশম নগরী, শিক্ষা নগরী, আমের রাজধানী, শান্তির শহর এবং সবুজ নগরী। আজ আপনাদের জানাব সেই রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান গুলো নিয়ে।

রাজশাহী শহরের আরেকটি পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। রাজশাহী শহরের ঐতিহাসিক সব স্থান দেশজুড়ে খুবই সুপরিচিত। পুঠিয়া রাজবাড়ী, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর আর বাঘা মসজিদ সহ আরো নানান ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে রাজশাহীতে।  চলুন তাহলে আজ এক পলকে দেখে নিই রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে কোন কোন জায়গা গুলোতে না গেলেই নয়। 

" " "
"

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান – Rajshahi Tourist Spot

পুঠিয়া রাজবাড়ী 

রাজশাহীর প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম একটি নিদর্শন হল পুঠিয়ার রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ী কে পাঁচআনি জমিদারবাড়ী ও বলা হয়। রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার পূর্বে ৬০ একর জমির উপর এই রাজবাড়ী প্রতিষ্ঠিত। এই রাজবাড়ী সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৫৩৮ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলায় আফগান শাসন থাকায় এর বিভিন্ন অংশ আফগানদের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী ১৮৯৫ সালে ইন্দো ইউরোপীয় নকশার আদলে এই রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। এই ভবনের সামনের কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে এবং দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে।

নিরাপত্তার জন্য এই রাজবাড়ির চারপাশে যে পরিখা খনন করা হয়েছিল তাও দেখতে খুব চমৎকার। পুঠিয়া রাজবাড়ীর চারপাশে ছয়টি দিঘী আছে যেগুলোর প্রত্যেকটার আয়তন ছয় একর করে। এখানে মন্দির ও আছে ছয়টি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালে অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ করা।এ ছাড়া এখানে রয়েছে রানীর গোসলের জন্য তৈরী ঘাট, অন্দরমহল এবং বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ। এ সুন্দর রাজবাড়ীটি ঘুরে দেখতে হলে যেতে হবে রাজশাহী।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা 

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হলো রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা। এটি পদ্মা নদীর তীরের রেসকোর্স ময়দানের ৩২.৭৬ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে। রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৪.২ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। এখানে চিড়িয়াখানার পাশাপাশি একটি শিশু পার্ক ও আছে। চিড়িয়াখানার  প্রবেশ গেইটে বিদ্যমান জিরাফের বিশাল ভাস্কর্য ও মৎস্য কুমারীর ফোয়ারা নজরে কাড়ে সবার।

এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে বাজরিকা, বালিহাস, ঘোড়া, হরিণ, অজগর সাপ, কুমির, উদবিড়াল সহ বিভিন্ন জলজ ও স্থলজ পশুপাখি। এই উদ্যানের কৃত্রিম পাহাড় থেকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া এই পার্কে পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট, নাগর দোলা সহ আরো বেশকিছু আকর্ষণীয় রাইড। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর যাবতীয় সকল তথ্য জানুন!

বরেন্দ্র জাদুঘর

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা হল বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। এই জাদুঘর বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম জাদুঘর। বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারেরও অধিক বেশি। এখানে রয়েছে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি রয়েছে এখানে। তাছাড়া ও খিষ্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তি সহ আরো অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। এই জাদুঘরে আরো রয়েছে মোঘল আমলের রৌপ্য মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা ইত্যাদি। বরেন্দ্র জাদুঘরে প্রায় ৫ হাজার পুঁথি রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলা ভাষায়। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পর্যন্ত পরিধিতে অঙ্কিত  বিভিন্ন চিত্রকর্ম এবং নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার আঁকা ছবি এই জাদুঘরে রয়েছে।

 ১৯১৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই প্রত্ন সংগ্রহশালাটি স্থাপিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এটি পরিচালনা করে। এই জাদুঘরে প্রায় ১২ হাজার গ্রন্থ সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি রয়েছে। জাদুঘরকে ৭টি প্রদর্শনকোষ্ঠে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম প্রদর্শনকোষ্ঠে নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে উদ্ধারকৃত ২৫৬টি ঐতিহাসিক সামগ্রী রয়েছে। দ্বিতীয় প্রদর্শনকোষ্ঠে আছে হিন্দু ও বৌদ্ধদের তৈরি কাঠ ও পাথরের নানা ভাস্কর। আর অন্যদিকে তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রদর্শনকোষ্ঠে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। এককথায় এই জাদুঘরের  ৭টি প্রদর্শনকোষ্ঠ দূর্লভ সব সংগ্রহশালায় ভর্তি। 

বাঘা মসজিদ

ইতিহাস থেকে জানা যায় এই মসজিদটি ১৫২৩-১৫২৪ সালে হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ তৈরী করেন। এই মসজিদটি ২৫৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। মসজিদের ৪টি মেহরাব রয়েছে যা অত্যন্ত কারুকার্য খচিত। মসজিদের মাঝখানের দরজার ওপর ফার্সি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে যা অত্যন্ত কারুকার্য খচিত। মসজিদটিতে সর্বমোট ১০টি গম্বুজ, ৪টি মিনার এবং ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভিতরে-বাইরে সবর্ত্রই টেরাকোটার নকশা বর্তমান। মসজিদের পাশে অবস্থিত বিশাল দিঘীও একটি দর্শনীয় স্থান। এছাড়া বাঘা মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি মাজার শরীফ।

হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রাঃ) এর মাজার

১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মোগল যোদ্ধা হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করলে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানীর বংশধরগণ বাগদাদ থেকে কাবুল, কান্দাহার ,পারস্য ও পাক-ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ.) এর পিতা আজাল্লা শাহ্ তখন দিল্লীরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ হযরত আলী (রাঃ) এর বংশধর ছিলেন। বড়পীর হযরত আব্দুর কাদির জিলানী তার নিজ দাদা। শাহ মখদুম (রাঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন।

তার মধ্যে একটির অবস্থান রাজশাহী শহরের দরগাহপাড়ায়। হযরত শাহ মখদুম (রঃ) এর দরগা-কে মাজার বলা হয় কারণ এর অবস্থান হযরত শাহ মখদুম রূপস (রঃ) এর কবরের পাশেই। কথিত আছে, তিনি রাজশাহীতে এসেছিলেন কুমিরের পিঠে বসে। আরো কথিত আছে যে, শাহ মখদুম কুমিরের পিঠে চড়ে নদী পার হতেন। বর্তমানে শাহ মখদুমের কবরের পাশে সেই কুমিরটির কবর রয়েছে।

সাফিনা পার্ক

সাফিনা পার্ক রাজশাহীর গোদাগাড়ীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। গোদাগাড়ীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৯ কি.মি দূরে দিগরাম খেঁজুরতলায় এই পার্কটি অবস্থিত। এই পার্কে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই ধারের ফসলের সবুজের সমাহার আপনার দৃষ্টি কাড়বেই। এই পার্কের ভেতরে দুইটি পুকুরের লেক ছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য পানিতে চলাচলের জন্য নৌকা ও রয়েছে। এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নগরদোলা, দোলনা, ট্রেনসহ আরো বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা। তাছাড়া ও পার্কটিতে রয়েছে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কনফারেন্স রুম।

দর্শনার্থীদের খাবারের জন্য রয়েছে আধুনিক রেস্তোরা সেই সাথে আছে কনফেকশনারি এবং ফাস্ট ফুডের দোকান। শিশুদের জন্য চাইলে খেলনা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারবেন এই পার্ক থেকে। পার্কের ভেতরে পিকনিক করার রয়েছে ২ টি পিকনিক স্পট। এই পার্কে সময় কাটিয়ে চাইলে পদ্মা নদীর ধারে সন্ধ্যার আগে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। সাফিনা পার্কে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২০ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান (Chittagong Tourist Spot) সমূহের তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!

জেনে তো নিলেন রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান সমূহের কথা। যে রাজশাহী শহর একই সাথে রেশম নগরী, শিক্ষা নগরী, আমের রাজধানী, শান্তির শহর এবং সবুজ নগরী হিসেবে পরিচিত এতক্ষন জানলাম সেই শহরের কথা। রাজশাহী শহরের ঐতিহাসিক যেসব স্থান দেশজুড়ে খুবই সুপরিচিত সেসবের ও উল্লেখ করা হয়েছে এই ব্লগে। এখন ব্যাগ গুছিয়ে রাজশাহী শহরের ঐতিহাসিক আর দর্শনীয় সব স্থান দেখার পালা ! 

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *