বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত বিভিন্ন ট্রেন বর্তমানে সার্ভিস দেওয়ার দিক দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা…এই কমন রুটে যাতায়াত করার উদ্দেশ্যে সুবিধাজনক ট্রেন খুঁজছেন তাদের জন্যই মূল আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করবো কর্ণফূলী ট্রেনের পরিচিতি, কর্ণফূলী ট্রেনের কার্যক্রম, কর্ণফূলী ট্রেনের লোকেশন, কর্ণফূলী ট্রেনের সময়সূচিসহ অন্যান্য তথ্য নিয়ে। সুতরাং কোনো তথ্য মিস করতে না চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন।
কর্ণফূলী ট্রেনের পরিচিতি
মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন হিসাবে দিনকে দিনকে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ট্রেনের অপর নাম হলো কর্ণফুলী এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রুটের বিভিন্ন স্টপেজে বেশ কয়েকবছর ধরে সার্ভিস দিয়ে আসছে এই ট্রেনটি৷ যাইহোক! যারা এই ট্রের নাম্বার সম্পর্কে জানেন না তাদের বলে রাখি, এই ট্রেনটির নাম্বার হলো ০৩/০৪। মূলত ট্রেনটির চট্টগ্রাম টু ঢাকা পরিবহন সার্ভিসকে ০৩ নাম্বার এবং ঢাকা টু চট্টগ্রাম পরিবহন সার্ভিসকে ০৪ নাম্বার ট্রেন হিসাবে ধরা হয়ে থাকে।
কর্ণফূলী ট্রেনের কার্যক্রম
এবার আসি কর্ণফূলী ট্রেনের কার্যক্রম সম্পর্কিত আলোচনায়। সার্ভিসের দিক দিয়ে এই ট্রেনটিকে কমিউটার ট্রেন বলা চলে। যা বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষের আন্ডারে সার্ভিস দিয়ে আসছে। এই ট্রেনটির ট্র্যাকজগ্যাজ হলো ১,০০০ মিলিমিটার।
বলে রাখা ভালো কর্ণফূলী এক্সপ্রেস নিয়মিত হারে ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পরিবহন সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এই সময়টাতে ট্রেনটি চট্টগ্রাম টু ঢাকা এবং ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন অংশে যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজ করে থাকে। কর্ণফূলী এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রতিদিনকার যাত্রা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু হলেও তা শেষ হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
কর্ণফূলী ট্রেনের লোকেশন
কর্ণফূলী ট্রেনের লোকেশন বা প্রাথমিক স্থান হিসাবে যদি কোনো তথ্য জানাবার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে কেবল বাংলাদেশ” শব্দটিকেই উল্লেখ করা যায়। তবে এই ট্রেনটি যেহেতু চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে সেহেতু ট্রেনটির লোকেশন হিসাবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের নামও বলা যেতে পারে। এছাড়াও চট্টগ্রাম টু ঢাকা এবং ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন স্টপেজেও থামে এই কর্ণফূলী এক্সপ্রেস ট্রেন নামক ট্রেনটি।
কর্ণফূলী ট্রেনের স্টপেজ
যারা কর্ণফূলী ট্রেনের স্টপেজ সম্পর্কে কোনো তথ্যই জেনে রাখবে না তাদের হয়তো যাত্রা পূর্ববর্তী বা যাত্রা পরবর্তী সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। সুতরাং আসন্ন ভোগান্তি এড়াতে চলুন জেনে নেওয়া যাক কর্ণফূলী ট্রেনের স্টপেজ সম্পর্কিত সঠিক তথ্যাবলি। জানা যাক এমনকিছু স্টপেজ লোকেশন বা স্টপেজ স্টেশন সম্পর্কে.. যেখানে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে থাকে:
- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন
- তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন
- বনানী রেলওয়ে স্টেশন
- ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন
- বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন
- টঙ্গী জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- পুবাইল রেলওয়ে স্টেশন
- নলছাটা রেলওয়ে স্টেশন
- আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশন
- ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলওয়ে স্টেশন
- ঘোড়াশাল রেলওয়ে স্টেশন
- জিনারদী রেলওয়ে স্টেশন
- নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন
- আমিরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
- খানাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
- হাটুভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন
- মেথীকান্দা রেলওয়ে স্টেশন
- শ্রীনিধি রেলওয়ে স্টেশন
- দৌলতকান্দি রেলওয়ে স্টেশন
- ভৈরব বাজার জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
- তালশহর রেলওয়ে স্টেশন
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন
- পাঘাচং রেলওয়ে স্টেশন
- ভাতশালা রেলওয়ে স্টেশন
- আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন
- ইমামবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
- কসবা রেলওয়ে স্টেশন
- মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন
- সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন
- শশীদল রেলওয়ে স্টেশন
- রাজাপুর রেলওয়ে স্টেশন
- সদর রসুলপুর রেলওয়ে স্টেশন
- কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন
- ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন
- লালমাই রেলওয়ে স্টেশন
- আলীশ্বর রেলওয়ে স্টেশন
- লাকসাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- নাওটি রেলওয়ে স্টেশন
- নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশন
- হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশন
- গুণবতী রেলওয়ে স্টেশন
- শর্শদি রেলওয়ে স্টেশন
- ফেনী জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- কালিদহ রেলওয়ে স্টেশন
- ফাজিলপুর রেলওয়ে স্টেশন
- মুহুরীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
- চিনকী আস্তানা রেলওয়ে স্টেশন
- মাস্তাননগর রেলওয়ে স্টেশন
- মীরসরাই রেলওয়ে স্টেশন
- বারতাকিয়া রেলওয়ে স্টেশন
- নিজামপুর কলেজ রেলওয়ে স্টেশন
- বারৈয়াঢালা রেলওয়ে স্টেশন
- সীতাকুন্ড রেলওয়ে স্টেশন
- বাড়বকুন্ড রেলওয়ে স্টেশন
- কুমিরা রেলওয়ে স্টেশন
- ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন
- ফৌজদারহাট রেলওয়ে স্টেশন
- কৈবল্যধাম রেলওয়ে স্টেশন
- পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন
- চট্টগ্রাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- এবং সবশেষে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন
কর্ণফূলী ট্রেনের সিট ও কর্ণফূলী ট্রেনের টিকিট প্রাইজ
কর্ণফূলী ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কিত আর্টিকেলের আজকের এই আয়োজনে আমরা আলোচনা করবো কর্ণফূলী ট্রেনের সিট ও কর্ণফূলী ট্রেনের টিকিট প্রাইজ নিয়ে। মূলত প্রতিটি ট্রেনেরই সিট ক্যাটাগরি ভাগ করা থাকে। সেই ক্যাটাগরিই অনুযায়ী টিকিট প্রাইজ বা ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক কর্ণফূলী এক্সপ্রেস ট্রেনের কোন ক্যাটাগরি সিটের দাম কত হতে পারে:
- শোভন সিটের দাম ২৮৫ টাকা
- শোভন চেয়ার ক্যাটাগরির প্রতি সিটের দাম ৩৪৫ টাকা
- প্রথম সিটের দাম ৪৬০ টাকা
মূলত কর্ণফূলী ট্রেনের সিট ক্যাটাগরি হিসেবে ৩ টি ক্যাটাগরি রয়েছে। এসব ক্যাটাগরির মাঝে প্রথম সিটের দাম বা ভাড়া কিছুটা বেশি। বাকিগুলির কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রাইজ সিলেক্ট করা হয়েছে। তাছাড়া নির্ধারিত ভাড়ার সাথে ইতিমধ্যেই ১৫% ভ্যাট যুক্ত করা আছে। যা আপনাকে আলাদা করে পে করতে হবে না। তবে হ্যাঁ! দাম দেখে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এই কর্ণফূলী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য ট্রেনের ভাড়ার চাইতে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
কর্ণফূলী ট্রেনের সময়সূচি
আপনি কি আপনার পরবর্তী চট্টগ্রাম টু ঢাকা বা ঢাকা টু চট্টগ্রাম যাতায়াতের ক্ষেত্রে কর্ণফূলী ট্রেনের সাহায্য নিতে চান? সেক্ষেত্রে চলুন জেনে নেওয়া যাক কর্ণফূলী ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে।
মূলত এই ট্রেনটি চট্টগ্রাম টু ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে এবং যাত্রা শেষ হয় তার পরের দিন সকাল ৬.১৫ মিনিটে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে আসার যাত্রাটুকু শুরু হয় সকাল ৮.১৫ মিনিটের দিকে এবং দিনের সবশেষে যাত্রাটুকু শেষ হয় একেবারে ভোর ১০.০০ মিনিটে।
কর্ণফূলী ট্রেনের বন্ধের দিন
কর্ণফূলী ট্রেন সার্ভিস গ্রহণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর কোনো অফ ডে নেই। অর্থ্যাৎ যাত্রীদের বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করতে ট্রেনটি প্রতিদিনই সার্ভিস প্রদান করে থাকে। তাছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়েও ট্রেনটির ছুটির সংখ্যা থাকে অনেক কম। সুতরাং প্রায় প্রতিদিনই আপনি এই ট্রেনের সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন।
কর্ণফূলী ট্রেনের সুবিধা-সমূহ
বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ট্রেন সার্ভিস চালু থাকলেও কেনোই বা আপনি কর্ণফূলী ট্রেন সার্ভিসে আগ্রহী হয়ে উঠবেন? চলুন তবে এবারে এই প্রশ্নের উত্তরগুলিকে এক এক করে বের করা যাক! মূলত এই ট্রেনটিতে থাকা যেসব সুবিধা আপনাকে একজন নিয়মিত যাত্রীতে পরিণত করবে সে-সব সুবিধা হলো:
- সাশ্রয়ী প্রাইজে টিকিট সংগ্রহের সুযোগ
- অনলাইনে ঘরে বসে টিকিট কেনার সুবিধা
- সপ্তাহে প্রতিদিনই সার্ভিস উপভোগ
- নামাজের জন্যে থাকা বিশেষ ব্যবস্থা
- নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জানালার পাশে থাকা এ্যালুমিনিয়ামের শাটারের ব্যবস্থা
- এসি কেভিন উপভোগের সুবিধা
- প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ এবং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ
ইতি কথা
কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই কর্ণফূলী ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কিত আর্টিকেলটি? আশা করি ভালো লেগেছে। এই ট্রেন সম্পর্কিত সকল তথ্য একসাথে তুলে ধরার কারণে হয়তো এক আর্টিকেলই আাপনার কর্ণফূলী ট্রেন ভ্রমণের পার্টনার হবার যোগ্যতা রাখে। যাইহোক! যারা নিরাপদ এবং দ্রুত ট্রেন পরিবহন সার্ভিসের সন্ধান করছেন তারা এই কর্ণফূলী এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন৷