সেন্টমার্টিন দ্বীপ ট্যুরিস্ট গাইডলাইন-যেভাবে যাবেন, যেখানে থাকবেন বিস্তারিত তথ্য জানুন!
সেন্টমার্টিন দ্বীপ : এই দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সম্পর্কে তো আমরা সকলেই মোটামুটি জানি। তবে তার আগে বলে রাখা ভালো প্রবাল দ্বীপ মানে হলো এক প্রকার দ্বীপ যা প্রবাল ছাইভস্ম ছড়ানো কোনো সামুদ্রিক স্থান বা সমুদ্রের পাড়! এসব দ্বীপ মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
ঠিক তেমনই বাংলাদেশও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় এই দেশেও রয়েছে একটি অনন্য সৌন্দর্যে ভরপুর প্রবাল দ্বীপ। যার নাম সেন্টমার্টিন দ্বীপ। যদিও এই দ্বীপের নাম শোনেনি এমন কাউকে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না! চলুন তবে আজ সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে লেখা একটি ভ্রমণ গাইডলাইন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ – Saint Martin Island
সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিচিতি
‘নারকেল জিঞ্জিরা’ ও ‘দারুচিনিদ্বীপ’ খ্যাত এই প্রবাল দ্বীপের পরিচয় খুব একটা গভীরভাবে দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। কেননা এই দ্বীপ দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ও হ্যাঁ! সেন্টমার্টিনকে ‘নারকেল জিঞ্জিরা’ ও ‘দারুচিনিদ্বীপ’ নামে পরিচিত করানোর পেছনেও একটি কারণ রয়েছে। সেটি হলো স্থানীয়দের কাছে এই দ্বীপ সেন্টমার্টিন নামে নয়, ‘নারকেল জিঞ্জিরা’ ও ‘দারুচিনি দ্বীপ’ নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পুরো এরিয়াটি মূলত ০৮ কিলোমিটারের বিশাল সৌন্দর্যক্ষেত্রে! যেখানে চাষ হয় মানসিক শান্তির! বাংলাদেশে যে ক’টি দর্শনীয় স্থানে সারা বছর পর্যটকের ভীড় লেগেই থাকে সে ক’টি দর্শনীয় স্থানের মাঝে এই সেন্টমার্টিন দ্বীপও একটি! সুতরাং বুঝতেই পারছেন ঠিক কতটা সৌন্দর্য ক্ষমতা নিয়ে পর্যটকদের মুগ্ধ করছে এই প্রবাল দ্বীপ!
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই দ্বীপটিতে ঘুরতে গেলেই দেখা মিলবে সারি সারি নারিকেল গাছ। মনে হবে অসংখ্য পাহারাদার বছরের পর বছর ধরে এই প্রবাল দ্বীপকে পাহারা দিয়ে আসছে নিঃস্বার্থভাবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর অবস্থান – Saint Martin Location
এবার আসি সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর অবস্থান এর ব্যাপারে। যা আপনাকে এই প্রবাল দ্বীপ নিজ চোখে উপভোগ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে নিজের মতো করে সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়ে বসে আছে এই সেন্টমার্টিন দ্বীপ। আরেকটু সহজ করে বললে এই দ্বীপের অবস্থান কক্সবাজারের একটি অংশে।
মূলত কক্সবাজার থেকে এই প্রবাল দ্বীপ বা সেন্টমার্টিন এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটারের মতো। সুতরাং যারা কক্সবাজারের বাসিন্দা তাদের কাছে এই সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘনঘন ভ্রমণ করাটা যেনো মারাত্মক কোনো বিষয়ই না! আবার যারা কক্সবাজারে ঘুরতে যান তারাও কিছুটা বাড়তি সময় করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে যেতে মিস করেন না। এছাড়াও সারাদেশের পর্যটকের চাপ সামলানোর ব্যাপার তো আছেই!
সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর সৌন্দর্য
Saint Martin Island এর সৌন্দর্য সম্পর্কে বলার মতো কোনো ভাষা হয়তো আজো খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো বছরের পুরোটা সময় দ্বীপটিতে জড়ো হওয়া হাজারো পর্যটকের পদচারণা!
শুরুতেই বলে রাখি যারা এই দ্বীপ ভ্রমণে আগ্রহী তারা অন্ততপক্ষে একটা দিন হাতে রেখে তবে ট্যুর প্ল্যানিং করবেন৷ কারণ দিনে গিয়ে দিনে চলে আসা ভ্রমণ প্ল্যানিংয়ে পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপ কারো পক্ষে কখনোই উপভোগ করা সম্ভব হবে না। সুতরাং কমপক্ষে হাতে একটা দিন রেখে তবেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বেড়িয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিবেন৷
সেন্টমার্টিন দ্বীপে দেখার মতো সৌন্দর্যময় বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সবার আগে বলতে হয় এর স্বচ্ছ পানি সম্পর্কে। এই দ্বীপের পানি এতোটাই স্বচ্ছ যে, সহজেই এতে নিজের স্পষ্ট অবয়ব উপভোগ করা যায়।
এছাড়াও বিকেলের দিকে সেন্টমার্টিন যেনো তার সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে পর্যটকের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে৷ সূর্য ডোবার মুহুর্তের পাশাপাশি শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশ আপনার কষ্টের জার্নিকেও স্বার্থক করে তুলবে।
একটাবার কল্পনা করুন তো নীল আকাশের নিচে সারি সারি নারিকেল গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক এমন কোথাও ফ্রেশ হাওয়া খেতে খেতে জীবনটা উপভোগ করছেন! ব্যাপারটা কিন্তু কোনোভাবেই ফেলে দেবার মতো নয়! ঠিক এমনই একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে এই Saint Martin Island।
শুধুমাত্র সৌন্দর্যই নয়! রূপেগুণে সবদিক দিয়েই পার্ফেক্ট এই দ্বীপ। সামুদ্রিক সম্পদের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে এই দ্বীপটি। প্রবাল, গোলাপী ডলফিন, হাঙ্গর, জীববৈচিত্র, রে ফিস, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস কি নেই এই জনপ্রিয় দ্বীপটিতে! সবমিলিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ আপনার ভ্রমণকে শতভাগ সফল এবং অর্থবহ করে তুলতে একাই যথেষ্ট!
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেভাবে যাবেন
রূপ এবং গুণের বর্ণনা শুনে নিশ্চয় এক্ষুণি ছুটে যেতে মন চাইছে? চাইবারই কথা! এতো জনপ্রিয় এবং সৌন্দর্যে ভরপুর পর্যটন এলাকা প্রতিটি ভ্রমণপিয়াসীকে লোভী না বানিয়ে কোনোভাবেই ছাড়তে পারে না।
সে যাইহোক! আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো সেন্টমার্টিন দ্বীপে কিভাবে যাওয়া যায় সে-সম্পর্কে।
বলে রাখা ভালো কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার সহজ এবং একমাত্র পথ। ঢাকা শহর কিংবা অন্যান্য অঞ্চল থেকে সরাসরি টেকনাফে পৌঁছাতে হলে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টার মতো লাগতে পারে। সবশেষে টেকনাফ থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনে। এক্ষেত্রে আপনাকে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি যেকোনো একটি জাহাজের সাহায্য নিতে হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করবেন
খাওয়া-দাওয়া ছাড়া যেনো কোনো ভ্রমণ একেবারে জমেই না। আগেই বলেছিলাম সেন্টমার্টিন হলো নারিকেল গাছের দ্বীপ। সেদিক দিয়ে এই স্থানটিতে প্রচুর পরিমাণে ডাব পাওয়া যায়।
শুধু তাই নয়! এখানকার ডাব স্বাদের দিক থেকে বেশ মিষ্টি এবং সুস্বাদু! সুতরাং যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ করার চিন্তাভাবনা করছেন তারা এখানকার মিষ্টি ডাব অবশ্যই টেষ্ট করে যাবেন।
এছাড়াও সেন্টমার্টিনে ফ্রেশ মাছ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ছোট ছোট দোকানে কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা সরাসরি রান্না করে পরিবেশন করে থাকে। এসব রান্না করা মাছ স্বাদের দিক দিয়ে অনন্য। একবার টেস্ট করতে পারলে সারাজীবন মুখে লেগে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপরে যেসব খাবার সাজেস্ট করলাম প্রায় সব খাবার সেন্টমার্টিন দ্বীপে সহজেই পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে বাজার বিচ, আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য খাবারের হোটেলে চলে যেতে পারেন৷
সেন্টমার্টিন হোটেল – Saint Sartin Resort
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেখানে রাত্রিযাপন করবেন
আগেই বলেছি, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে একদিনের কম সময় হাতে নিয়ে বের হওয়াটা বড্ড বোকামি। এতে করে দ্বীপের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করার কোনো জোঁ থাকে না। এক্ষেত্রে একদিন বা তার বেশি দিন হাতে রেখে তবে প্ল্যান সাজানো উচিত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে চাইলে উন্নতমানের হোটেল এবং কটেজের সাহায্য নিতে পারেন। তবে এসব হোটেল বা কটেজ বুক করতে হলে মোটামুটি পরিমাণের বাজেট থাকা চাই।
রাত কাটানোর ক্ষেত্রে সমুদ্রবিলাস হোটেল বুক করার সাজেশন দিতে চাই। এই হোটেলে ৫০০-১০০০ টাকা ভাড়ায় ৪ টি রুম পাওয়া যাবে। এছাড়াও ব্ল–মেরিন রিসোর্ট, প্রিন্স হেভেন, ড্রিম নাইট রিসোর্টের রুমগুলিও ভাড়া নিতে পারেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ এর বাড়তি টিপস
যেকোনো ট্যুর বা ভ্রমণকে আরো অর্থবহ করে তুলতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস না মানলেই নয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেসব টিপস মেনে চলা উচিত সেসব টিপস হলো:
- দ্বীপে হাঁটাহাঁটি করার সময় কোনো আবর্জনা না ফেলা
- পানিতে নামার সময় যথাসম্ভব সতর্ক থাকা
- দ্বীপে চলাচলের সময় অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিরাপদে রাখা
- জাহাজে চড়ার আগে ভাড়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া
- হোটেল বুক করার আগে তা একবার চেক করে নেওয়া
আশা করি উপরের টিপসগুলি মেনে চলতে পারলে আপনার সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ আরো আনন্দময় হয়ে উঠবে৷
ইতি কথা
সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আয়োজন! আশা করি সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে একটি সঠিক এবং সম্পূর্ণ গাইডলাইন শেয়ার করতে সক্ষম হয়েছি। তবুও যদি আপনার এ-সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তরের প্রয়োজন পড়ে তবে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!