বান্দরবান ভ্রমণ (Bandarban Tour) কি দেখবেন, কোথায় থাকবেন এবং কি খাবেন?
প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে অবলোকনের জন্য বান্দরবান ভ্রমণ সবথেকে ভালো সিদ্ধান্ত। বান্দরবান রূপ-সৌন্দর্য ভরপুর পাহাড়ি কন্যা নামে পরিচিত। বান্দরবান হচ্ছে ভৌগোলিক কারণে সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি তে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান সকলের কাছে অন্যতম।
যারা মেঘের সৌন্দর্যে নিজেদেরকে বিমোহিত করতে চান এবং পরিবার-পরিজনকে নিয়ে একটি সুন্দর প্রকৃতির মধ্যে নিজের মনকে বিকশিত করতে চান তারা ঘুরে আসতে পারেন বান্দরবানের অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি থেকে।
বান্দরবান ভ্রমণ – Tourist Spot of Bandarban
বান্দরবান ভ্রমণ কি কি পরিকল্পনা করবেন এবং কোথায় কোথায় ঘুরবেন?
বান্দরবনে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অতি সুপরিচিত কয়েকটি বিখ্যাত পরিদর্শনের স্থান রয়েছে সেগুলি হচ্ছেঃ
- নীলগিরি
- নীলাচল
- স্বর্ণমন্দির
- বগালেক
- কেওক্রাডং
- নাফাখুম
- শৈলপ্রপাত ঝর্ণা
- চিম্বুক পাহাড়
- আলীর সুড়ঙ্গ
- তিন্দু এলাকা
- মারায়ন তং
নীলাচল এবং নীলগিরি
নীলাচল এবং নীলগিরি বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর এবং মনকাড়া পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। চারদিকে সবুজ এবং মেঘের রাজ্যে আপনি খুব সহজেই বিমোহিত হয়ে যাবেন।
স্বর্ণমন্দির এবং বগালেক
স্বর্ণমন্দির এবং বগালেক বান্দরবান ভ্রমণ এর অন্যতম দর্শনীয় স্থান। স্বর্ণমন্দির মূলত বৌদ্ধমন্দির একটি বান্দরবান সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি আপনাকে সবুজের মাঝে একটি অনন্য কীর্তি স্থাপনা উপভোগ করতে সাহায্য করবে এবং মুগ্ধ করবে। বগালেক হচ্ছে একটি জলাধারের প্রসার এবং এটি কেওক্রাডং পাশে অবস্থিত।
কেওকারাডাং
কেওকারাডাং হচ্ছে ৩১৭২ ফুট উঁচু একটি পাহাড় এবং বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। নাফাখুম জলপ্রপাত নাম করা এবং সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান। পানি প্রবাহের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম। নাফাখুম জলপ্রপাত টি বান্দরবানের থানছি উপজেলায় অবস্থিত।
চিম্বুক পাহাড় এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা
চিম্বুক পাহাড় এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা বান্দরবানের অন্যতম সৌন্দর্য মন্ডিত এবং দর্শনীয় স্থান। চিম্বুক পাহাড় বান্দরবান জেলা থেকে ন্যূনতম ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা ৮ কিলোমিটার। মজার ব্যাপার হচ্ছে চিম্বুক পাহাড়ে রয়েছে চিহ্ন পর্যটনকেন্দ্র যেটি অনন্য সৌন্দর্যের অধিকারী। চিম্বুক পাহাড়ে আপনার সময় কিভাবে চলে যাবে আপনি বুঝতে পারবেন না। শৈলপ্রপাত ঝর্ণা টি একদম থানচি রাস্তার পাশেই অবস্থিত। আপনি খুব সহজেই শৈলপ্রপাত ঝর্ণা পরিদর্শন করতে চলে যেতে পারবেন।
আলীর সুড়ঙ্গ
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত রয়েছে আলীর সুড়ঙ্গ। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে এই আলোর সুরঙ্গ এবং এটাকে অনেকে রহস্যময় সুরঙ্গ বলে অবহিত করে থাকেন। মূলত আলীর পাহাড়ে এই সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে বলে একে আলী সুরঙ্গ বলে অভিহিত করা হয়।
তিন্দু
তিন্দু হচ্ছে বাংলাদেশের ভূস্বর্গ নামে পরিচিত। অনন্য সবুজে ভরা এই তিন্দু অঞ্চল। তিন্দুর পাশ দিয়ে বহমান সাঙ্গু নদী সৌন্দর্যের অধিকারী এবং যা সহজেই মানুষের মনকে ছুঁয়ে যায়। শঙ্খ নদীর স্বচ্ছ পানি ঢেলে নিজের শরীরকে ভেজাতে চাইলে আপনাকে তিন্দু শহরের যেতেই হবে। খুব সহজেই আপনি এখানে আপনার সময় থেকে অনন্য সুন্দর হবে কাটাতে পারবেন অপার সৌন্দর্যের সাথে এবং নৌকায় করে ঘুরে বেরিয়ে।
মারায়ন তং
মারায়ন তং পাহাড়টি বান্দরবানের আলীকদম থানায় অবস্থিত। এই পাহাড়টি 640 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং এখানে রয়েছে একটি বদ্ধ উপাসনালয়। এই পাহাড়ের উচ্চতা পাহাড় থেকে নেমে যাওয়া সাপের মত চিকন আঁকাবাঁকা পথ চলা নদীর দৃশ্য যেন আপনাকে অচিরেই বিমোহিত করে তুলবে এবং আপনি মনে করবেন আপনি কোন কল্পনার রাজ্যে বাস করছেন।
উপরিউক্ত দর্শনীয় স্থান ছাড়াও এলাকায় আরও রয়েছে কিছু নয়নাভিরাম দৃশ্য সমৃদ্ধ নামকরা স্থান যেমনঃ থানচি, জাদিপাই, আমিয়াখুম, রেমাক্রি, রোয়াংছড়ি, মিলনছড়ি, ইত্যাদি। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষেরা অবশ্যই এই সকল দর্শনীয় স্থান গুলি অবলোকন করতে ভুলে যাবেন না।
চলুন এক নজরে দেখে নিই আপনি কিভাবে কোথায় যাবেন, ঘুরবেন, এবং আরো বিস্তারিত-
কিভাবে যাবেন বান্দরবান?
বান্দরবান টুডে কথা মনে আসতে দিন ভাবতে হবে কিভাবে বান্দরবান যেতে পারেন? বর্তমানে বান্দরবান যাওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। আপনি চাইলে আপনার সাধ্যের ভেতর এবং পছন্দমত পরিবহন ব্যবস্থা পেতে পারবেন। প্লেন, ট্রেন অথবা বাস যেকোনো একটি পরিবহনকে বেছে নিতে পারেন। আপনি যদি ট্রেনে বা বাসে করে মাধ্যমিক দেওয়ার চিন্তা করে থাকেন তাহলে আপনাকে সময় দিতে হবে ন্যূনতম ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঢাকা থেকে বান্দরবান দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৭ কিলোমিটার।
চলুন জেনে নেই ঢাকা থেকে কোন কোন বাস এবং ট্রেন সার্ভিস আপনি পাবেন বান্দরবান ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্যঃ
বাস সার্ভিস
বাসে করে বান্দরবান যেতে চাইলে আপনাকে কমলাপুর আরামবাগ সায়েদাবাদ থেকে বাস ধরতে হবে। আপনি আপনার সাধ্যের মধ্যেই এসি এবং ননএসি সব ধরনের বাস সার্ভিস পেয়ে যাবেন। শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্রাভেলস, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইত্যাদি বাস সার্ভিস গুলাতে এসি এবং ননএসি সকল সুবিধা পাওয়া যাবে। এসি বাস গুলোতে আপনাকে ন্যূনতম ৯৫০ থেকে সর্বোচ্চ পনেরশো টাকা বাস ভাড়া দিতে হবে। তবে নন এসি বাস গুলোতে আপনাকে মাত্র ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা ভাড়া দিলেও চলবে।
ট্রেন সার্ভিস
ট্রেনে করে বান্দরবান ভ্রমণ এ যেতে চাইলে একটি অসুবিধা হচ্ছে আপনি সরাসরি সেখানে পৌঁছাতে পারবেন না। আপনাকে প্রথমে চিটাগং পৌঁছাতে হবে যেখানে ট্রেনে করে যেতে আপনাকে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বা কখনো কখনো ৬ ঘন্টা লাগতে পারে। সোনার বাংলা, মহানগর এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, তৃণা এক্সপ্রেস, ইত্যাদি ট্রেন সার্ভিসের করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন। ট্রেনের মান এবং সার্ভিস এর উপর ভিত্তি করে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১০০ টাকা পর্যন্ত সিট ভাড়া দিতে হবে।
প্লেন সার্ভিস
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান ভ্রমণ এর কোন প্লেন সার্ভিস নেই। আপনাকে ঢাকা থেকে প্লেনে করে প্রথমে চিটাগাং পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, তারপর সেখান থেকে বান্দরবান যেতে হবে। আপেল ঢাকা থেকে চিটাগাং যাওয়ার ক্ষেত্রে চারটি প্লেন সার্ভিস পাবেন এবং এই প্ল্যান গুলি চিটাগং এর উদ্দেশ্যে সকাল আটটা থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পর পর ছেড়ে যায়। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, এই চারটি এয়ারলাইন্সে করে আপনি চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভাড়া বহন করতে হবে সর্বনিম্ন ৩২০০ থেকে সর্বোচ্চ নয় হাজার টাকা পর্যন্ত।
কোথায় থাকবেন এবং কি খাবেন?
বান্দরবান একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান এবং বান্দরবানের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থানগুলো থানছি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার কারণে বান্দরবান এলাকায় আশেপাশেই অনেক ভালো ভালো থাকার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে এবং নামিদামি রিসোর্ট আছে। চলো এক নজরে দেখে নিই আপনি কোন কোন রিসোর্ট এবং হোটেলে আপনার রাত্রিযাপনের জন্য ব্যবস্থা করতে পারেনঃ
Bandarban Resort List
- হোটেল প্লাজা
- হিল সাইড রিসোর্ট
- হোটেল হিল ভিউ
- ভেনাস রিসোর্ট
- নীলগিরি হিল রিসোর্ট
- হোটেল হিলটন
- সাইরু হিল রিসোর্ট
- পর্যটন মোটেল
এই সকল হোটেল এবং রিসোর্ট ছাড়াও আপনি আরবে যাবেন বিলাসবহুল এবং সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অনেক হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টের ব্যবস্থা। রিসোর্ট গুলিতে সর্বোচ্চ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। মান এবং সেবার বিভেদের হোটেলগুলোতে ভাড়া বিভিন্ন রকমের হবে। সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০/১১ হাজার টাকার মধ্যে আপনি হোটেলগুলি একদিন রাত্রিযাপনের জন্য বুকিং করতে পারবেন।
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এতগুলি হোটেল এবং রিসোর্ট থাকার পরেও আপনার খাবার নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। কারণ প্রতিটি হোটেল এবং রিসোর্ট এ দর্শনীয় ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের দেশী এবং বিদেশী খাবারের সুব্যবস্থা। আপনি খুব সহজেই আপনার সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত এবং দামি খাবারও পেয়ে যাবেন।
মন্তব্য
আশাকরছি বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে আপনার আর কোন দ্বিধা থাকবে না। তবে একটি কথা না বললেই নয় যে বান্দরবানের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলোতে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে আপনাকে সময় এবং সঠিক পরিকল্পনা আগে থেকে করে নিতে হবে। কারণ আপনি সব স্থানেই একবার দিলে যে শেষ করতে পারবেন না।
তাই প্রতিটি দর্শনীয় স্থানের স্থান এবং দূরত্ব অনুসরণ করে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করে নিতে হবে। তাহলে আর দেরি কেন? সময় করে চলুন ঘুরে আসুন প্রকৃতির রাজকন্যা বান্দরবান এর রাজ্য থেকে।