" " নুহাশ পল্লীর পেছনের গল্প । কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন জানুন বিস্তারিত তথ্য!
" " "
"
গাজীপুরজনপ্রিয়ঢাকা বিভাগদর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

নুহাশ পল্লীর পেছনের গল্প । কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন জানুন বিস্তারিত তথ্য!

" " "
"

চলে এলাম আরো একটি ট্যুরিস্ট গাইডলাইন নিয়ে। শিরোনাম দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন আজ আমরা কি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি! বিশেষ করে হুমায়ুন-প্রেমীরা নিশ্চয় ইতিমধ্যেই মনের মাঝে নুহাশ পল্লীর একটি স্নিগ্ধ পরিবেশ কল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছেন। তবে আমরা আর দেরি করছি কেনো? চলুন তবে গল্পে গল্পে জেনে নেওয়া যাক নুহাশ পল্লী পরিচিত,এর লুকনো ইতিহাস, অবস্থান এবং কিভাবে যাবেন সে-সম্পর্কে! 

" " "
"

Nuhash Polli – নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী পরিচিতি 

নুহাশ পল্লী নামক একটি স্থান যে বাংলাদেশে আছে সে-সম্পর্কে আমরা জানলেও নুহাশ পল্লীর আসল পরিচয় সম্পর্কে হয়তো আমরা এখনো জানিই না! তবে না জানাটা দোষের কিছু নয়। বরং জানার চেষ্টা না করাটাই বড়সড় দোষের কাজ। চলুন এবার নিজ ঘাড়ের উপরে থাকা ভারী দোষের বোঝা সরানোর জন্যে হলেও জেনে নিই নুহাশ পল্লী পরিচিতি সম্পর্কে। 

" " "
"

আমরা মোটামুটি সকলেই বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানি। যারা বই পড়তে ভীষণ পছন্দ করি তারা হয়তো কিছুটা ডিটেইলসে জানি। আবার সাহিত্যের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা নেই তারাও হয়তো এই মহান গুণী লেখক সম্পর্কে টুকটাক হলেও জানে। 

Nuhash Polli মূলত এই বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নিজস্ব বাগান-বাড়ি। যা তিনি বেঁচে থাকাকালীন সময়ে চলচিত্রের শুটিং-স্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তার মৃত্যুর পর এই বাড়িটি হয়ে উঠে বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্পটগুলির মধ্যে একটি। যা ঘুরে দেখতে প্রতিদিন বহু ভ্রমণপিয়াসীর আগমন ঘটে এই বাড়িটিতে। 

" " "
"

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বাড়িটিকে হুমায়ুন আহমেদ নিজ হাতে সাজিয়েছিলেন। যার ফলে এখনো পর্যন্ত বাড়িটিতে লেখকের শখের বিভিন্ন জিনিসপত্র, স্থান এবং পরিবেশ শোভা পাচ্ছে। বলে রাখা ভালো লেখকের ছেলের নাম কিন্তু “নুহাশ”। মূলত প্রিয়পুত্র নুহাশের নামেই হুমায়ুন আহমেদ জায়গাটির নামকরণ করেছিলেন ‘নুহাশ পল্লী’ নামে।

নুহাশ পল্লী কিভাবে যাব – Nuhash Polli Location

নুহাশ পল্লীর অবস্থান 

Nuhash Polli ভ্রমণে যেতে হলে সবার আগে যেটি দরকার সেটি হলো নুহাশ পল্লীর অবস্থান সম্পর্কে জেনে রাখা। সুতরাং আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা নুহাশ পল্লীর অবস্থান সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো। 

এই বাড়িটি মূলত গাজীপুরে অবস্থিত। মূলত গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে লেখকের এই শান্তিনিকেতন। একে তো গ্রামটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর! তার উপর সেই শান্ত গ্রামেই তৈরি করা হয়েছে নুহাশ পল্লী। সব মিলিয়ে লেখালেখি কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দৃশ্যের শুটিং করার ক্ষেত্রে সেরা স্পট হওয়ার যোগ্যতা রাখে এই বাড়িটি। লেখক-মনে বাড়ির পরিবেশের পাশাপাশি এর অবস্থান বিষয়ক মারাত্মক সতর্কতা এবং রুচিশীলতা যে কাজ করেছে তা বোঝাই যায়! 

নুহাশ পল্লীর ইতিহাস 

আপনি কি নুহাশ পল্লীর ইতিহাস সম্পর্কে জানেন? কিংবা এর পেছনের গল্প? 

" " "
"

নুহাশ পল্লী তৈরির পেছনে মূলত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কারণটি ভুমিকা রেখেছে সেটি হলো লেখকের প্রশান্তি। অর্থ্যাৎ হুমায়ুন আহমেদ প্রশান্তি খুঁজতে গিয়েই এই বাড়িটি তৈরি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে নুহাশ পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। 

তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন সময় কাটাতে পরিবারকে সাথে নিয়ে হুট করে চলে যেতে এই নুহাশ পল্লীতে। আবার মাঝেমধ্যে প্রিয় বন্ধুদের সাথে আড্ডার আয়োজনে চায়ে চুমুক দিতে দিতে রাত পার করে দিতে হুমায়ুন আহমেদ। আবার কখনো যদি তার পরিচালিত কোনো সিনেমা কিংবা নাটকে প্রাকৃতিক শান্তিময় স্থানকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজন পড়তো, তখনোও তিনি সাহায্য নিতে এই নুহাশ পল্লীর সৌন্দর্যের! 

মোটকথা সময়ে-অসময়ে, কাজে-অকাজে হুমায়ুন আহমেদের কাছে অনন্য শান্তির স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো এই নুহাশ পল্লী। বাড়িটির প্রতি হুমায়ুন আহমেদের এতো আগ্রহের পেছনেও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো তার তত্বাবধানে স্থাপিত সেখানকার বিভিন্ন স্থাপনা সাথে অসংখ্য ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছের বাগান! এসব খোলামেলা প্রকৃতির প্রতি তিনি বরাবরই মুগ্ধ এবং দূর্বল ছিলেন। 

আমরা সকলেই মোটামুটি জানি যে লেখালেখি করার ক্ষেত্রে খোলামেলা প্রাকৃতিক স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। হুমায়ুন আহমেদও তার ব্যাতিক্রম নন। তার নিজের অসংখ্য অসামান্য লেখার সাথে জড়িয়ে আছে এই নুহাশ পল্লীর প্রকৃতির অপার প্রশান্তি। যা লেখককে এতোটা গভীর লেখা উপহার দিতে সাহায্য করেছে। 

নুহাশ পল্লীর সৌন্দর্য 

সৌন্দর্যের দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে এই বাড়িটি অনন্য। নতুবা হুমায়ুন আহমেদের মতো জটিল মনের মানুষ এই বাড়িটিতে প্রশান্তি খুঁজে পেতেন না। বাড়ির আশপাশটা ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতেন না। 

সৌন্দর্যের কথা বলার ক্ষেত্রে সবার আগে নুহাশ পল্লীর স্থাপনাশৈলী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মূলত হোতাপাড়া বাজরের পিরুজালী নামক গ্রামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এই বাড়িটি। পুরো বাড়িটিই তৈরি করা হয়েছে সর্বমোট ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কি বিশাল বাড়ি এই নুহাশ পল্লী! বাড়িটির মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পর যে রাস্তাটি সোজা চলে গেছে মূলত সেি রাস্তাটিই নতুন কোনো পর্যটককে জানান দিবে ভেতরে ঠিক কতটা প্রশান্তির পরিবেশ তার জন্য অপেক্ষা করছে! 

Nuhash Polli কিন্তু দালানের দিক দিয়ে একটি পাকা দালান। কিন্তু এতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের টিনের চাল। হুমায়ুন আহমেদের কাছে বৃষ্টি পড়ার শব্দ মন্ত্রমুগ্ধ ছন্দ মনে হতো। সে সুবাদে টিনের চালে টুপটাপ শব্দে নিরবে ঝড়ে যাওয়া বৃষ্টি উপভোগ করতেই তিনি এই টিনের চাল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা বেশ ইউনিক সিদ্ধান্ত ছিলো সে-সময়! 

এবার আসি গাছ-গাছালির ব্যাপারে। একজন সাধারণ মানুষের কাছে গাছ কেবল প্রকৃতির একটি অংশ মনে হতে পারে। তবে লেখক এই গাছকে প্রয়োজনীয়তার সমাধান এবং সৌন্দর্যের খোরাগ হিসেবেই নিয়েছেন। যার ফলে তিনি নুহাশ পল্লীতে প্রায় ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ওষুধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। 

সবচেয়ে মজার এবং শিক্ষণীয় ব্যাপার হলো বাড়িটির আশপাশের লাগানো প্রতিটি গাছের গায়েই সেই গাছের নাম পরিচিতি সবই দেওয়া আছে। ফলে সাধারণত ভিজিটরেরা দ্রুত এসব দূর্লভ গাছ সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্য জেনে নিতে পারে। একেই বোধহয় বলে “বেড়াতে বেড়াতে শেখা”! নিঃসন্দেহে হুমায়ুন আহমেদের এই নুহাশ পল্লীর প্ল্যানিংটি ছিলো তার নিজেরই বিচক্ষণতার পরিচায়ক! 

এছাড়াও যারা হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত এবং তার লেখা খুব পছন্দ করেন তারা হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থলেরও দেখা পাবেন বাড়িটিতে। পাশাপাশি রয়েছে ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো। যা দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিতে সাহায্য করবে৷ শুধু তাই নয়! নুহাশ পল্লীতে আরো দেখা মিলবে পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তিসহ অন্যান্য চমকের! 

আর নুহাশ পল্লীর টি হাউস সম্পর্কে তো নাই বা বললাম! কেনোনা এটি সম্পর্কে বলার মতো কোনো ভাষাই নেই৷ সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো টি হাউসের সিঁড়িতে বসে আড্ডা দিতে পারলে আলাদা প্রশান্তি কাজ করে। এই হাউসের কিছুটা সামনে গেলেই দেখা মিলবে বিশাল এক জায়গা জুড়ে থাকা দীঘি লীলাবতীর! 

নুহাশ পল্লীতে যেভাবে যাবেন

নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার প্রতি এখনই যাদের লোভ জাগছে আর্টিকেলের এই অংশটি তাদের জন্য! শুরুতেই আপনাকে পৌঁছাতে হবে ঢাকার গাজীপুরে। সেখান থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সোজা চলে যাবে ন হোতাপাড়া বাজার৷ এই বাজার থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পথ পেরুলেই দেখা মিলবে পিরুজালী গ্রাম। ঠিক এই গ্রামটাতেই দাঁড়িয়ে আছে নুহাশ পল্লী! তারপরও যদি পথ চিনতে সমস্যা হয় তবে স্থানীয়দের সহায়তাও নিতে পারেন৷ 

ইতি কথা

আপনাদের পছন্দের পর্যটন এলাকা নুহাশ পল্লী নিয়ে এই ছিলো আমাদের আয়োজন! কতটুকু ভালো লেগেছে জানি না। তবে ঘুরতে যাওয়ার পূর্বে আশা করি এই এক আর্টিকেলটি পর্যটন স্থানটি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দিতে সক্ষম হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

" " "
"