" " কুসুম্বা মসজিদ কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন, ভ্রমণকালীন খাওয়া দাওয়া সহ বিস্তারিত ট্যুরিস্ট গাইড!
" " "
"
নওগাঁবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডরাজশাহী বিভাগ

কুসুম্বা মসজিদ কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন, ভ্রমণকালীন খাওয়া দাওয়া সহ বিস্তারিত ট্যুরিস্ট গাইড!

" " "
"

মসজিদ মানে প্রতিটি মুসলমানের কাছে বিশেষ প্রার্থনায় নিজেকে সপে দেওয়ার স্থান। যেখানে একান্তে আল্লাহ পাকের কাছে হাজিরা দেওয়া যায়, মন খুলে এবাদতের স্বাদ উপভোগ করা যায় এবং নিজের চাওয়া-পাওয়াগুলি আল্লাহ পাকের কাছে সুন্দরভাবে পেশ করা যায়। বাংলাদেশ যেহেতু একটি মুসলিমপ্রধান দেশ সেহেতু এই দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ। এসব মসজিদের মাঝে বেশকিছু মসজিদ ভ্রমণে বেশ আগ্রহবোধ করে সাধারণ দর্শনার্থী কিংবা ভ্রমণপিয়াসীরা। তেমনই একটি মসজিদ কুসুম্বা মসজিদ। এই মসজিদের স্থাপনাশৈলী যেমন চমৎকার তেমনই এবাদতের সুষ্ঠু পরিবেশের ক্ষেত্রেও বেশ এগিয়ে রয়েছে! চলুন তবে বিস্তারিত জানা যাক এবং দেখা যাক এই মসজিদ ভ্রমণ কি আদৌ আপনার ভ্রমণপিয়াসী মনের কোনো উপকারে আসবে কিনা! 

" " "
"

কুসুম্বা মসজিদ – Kusumba Mosque

কুসুম্বা মসজিদ পরিচিতি 

শুরুতেই বলে রাখি এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। যা সুলতানি আমলে তৈরি করা হয়েছিলো। সুতরাং যারা বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদ কিংবা স্থাপনা ভ্রমণে বেশ আগ্রহবোধ করেন তারা এই কুসুম্বা মসজিদকে পরবর্তী ভ্রমণের স্থান হিসেবে পছন্দ করে নিতে পারেন।

" " "
"

আমরা সকলেই জানি নওগাঁ জেলার ইতিহাস মুসলিম ঐতিহ্যের উজ্জল নিদর্শনগুলির জন্যে বেশ জনপ্রিয়। এদিক দিয়ে কুসুম্বা মসজিদও এসব নিদর্শনের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। যা সরাসরি নিজ চোখে উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভীড় করে থাকেন। এই মসজিদটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা দেখার মতো দিক হলো মসজিদটি বাংলা চালা ঘরের মতো! যা বাংলার পুরোনো ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে সক্ষম! 

কুসুম্বা মসজিদের পাশে খননকৃত দিঘী সম্পর্কেও একেবারে না বললেই নয়। মসজিদটির ঠিক উত্তর-দক্ষিণ পাশে থাকা ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট একটি বিশাল দিঘী সেই মসজিদ কার্যক্রম শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত গ্রামবাসী এবং মুসল্লিদের খাবার পানি, গোসল ও অযুর প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছে! 

" " "
"

কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে সবচেয়ে এক্সাইটমেন্টের ব্যাপার হলো মসজিদটির ছবি বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটের ব্যবহার করার ব্যাপারটি। আমাদের দেশীয় যে পাঁচ টাকার নোট রয়েছে সেই নোটে লক্ষ্য করলেই দেখবেন একটি মসজিদের ছবি ছাপানো রয়েছে। যা মূলত এই কুসুম্বা মসজিদেরই ছবি! সুতরাং নিঃসন্দেহে পাঁচ টাকার নোটে থাকা সেই মসজিদ সরাসরি উপভোগ করার মতো অভিজ্ঞতা জীবনে খুবই প্রয়োজন! আর কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণে এই অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হওয়াটাও সম্ভবপর হয়ে উঠবে! 

কুসুম্বা মসজিদ কোথায় অবস্থিত – Kusumba Mosque Location

এবার চলুন কুসুম্বা মসজিদ এর অবস্থান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় অবস্থিত সুলতানি আমলের একটি ঐতিহাসিক মসজিদ এই কুসুম্বা মসজিদ। যার স্থাপত্যরীতি কিংবা স্থাপত্যশৈলী নিজ চোখে উপভোগ করার লোভে নিয়মিত অসংখ্য দর্শক ভীড় জমান নওগাঁর মান্দা উপজেলায়। 

কুসুম্বা মসজিদ এর ইতিহাস 

শুরুতেই বলেছি কুসুম্বা মসজিদ মূলত একটি পুরোনো অর্থ্যাৎ ঐতিহাসিক মসজিদ। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে নিশ্চয় স্থাপনাটির একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে! আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা জানবো কুসুম্বা মসজিদের পেছনের গল্প কিংবা এর সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে! 

মূলত সুলতানি আমলেই তৈরি হয়েছিলো এই মসজিদ। পুরোনো দিনগুলির একটা সময়ে এসে বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রাদায়ের দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। তারই ফল কিংবা মাধ্যমগুলির একটি হলো সুলতানি আমলের ভিন্নধর্মী এই মসজিদ। ও হ্যাঁ! ভিন্নধর্মী মসজিদ বলার পেছনেও একটা কারণ রয়েছে। সে-সম্পর্কে আমরা না হয় আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে জানার চেষ্টা করবো৷ 

" " "
"

বলে রাখা হয় মসজিদটি নিয়ে গবেষণা করার পর জানা যায় এটি প্রায় সাড়ে চারশত বছরের পুরোনো একটি সুলতানি স্থাপনা। বেশ পুরোনো একটি স্থাপনা হওয়ায় এবং বাংলাদেশের স্থাপনারীতিকে সমৃদ্ধ করায় মসজিদটির ইতিহাসকে শ্রদ্ধার দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে ঠাঁই পায় এই মসজিদটির স্পষ্ট একটি ছবি। 

যারা কুসুম্বা মসজিদটি ভ্রমণ করতে যাবেন তারা লক্ষ্য করলেই দেখবেন এর মিহরাবের উপরে সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ নামের এক ব্যাক্তির নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। মূলত এই নামকে কেন্দ্র করেই ধরে নেওয়া হয় মসজিদটি সুলতানি আমলের হোসাইন শাহ শাসনকালীন সময়ের একটি মসজিদ। আবার অনেকেই ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করে জানতে পেরেছিলেন মসজিদটি সুলায়মান সুলতান তৈরি করেছিলেন তার নিজের তত্ত্বাবধানে। যদিও এই তথ্যের কোনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি পাওয়া যায়নি। 

কুসুম্বা মসজিদ এর স্থাপনাশৈলী 

অবস্থান সম্পর্কে তো জানা গেলো! এবার Kusumba Mosque ভ্রমণের মূল আকর্ষণ অর্থ্যাৎ এই মসজিদের স্থাপনাশৈলী সম্পর্কে জানা যাক। মসজিদটিকে পুরোপুরিভাবে তৈরি করা হয়েছে সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দেখার মতো বিষয় হলো কুসুম্বা মসজিদের স্থাপনাশৈলীর সৌন্দর্য একেবারে মুগ্ধ করার মতো ক্ষমতা রাখে। মূলত এই সৌন্দর্যের জের ধরে এই মসজিদটির অবয়ব কিংবা ছবি ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে! সুতরাং বুঝতেই পারছেন দেখার মতো এই মসজিদটির সৌন্দর্য আপনাকে ঠিক কতটা মুগ্ধ করতে পারে। 

একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন মসজিদটির স্থাপনারীতিতে সুলতানি আমলের নানান নকশা, স্থাপনা আইডিয়াসহ অনেককিছুকে বেশ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কালো ও ধুসর বর্ণের পাথর এবং পোড়া মাটির ইট ব্যবহার করে তৈরি করা এই মসজিদের প্রতিটি দেওয়ালে দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে মাটির তৈরি টালি, বিভিন্ন ফুলের নকশা, লতা-পাতার নকশার সাথে ঝুলন্ত শিকল ও মনোরম শৈল্পিক কারুকাজের ছোঁয়া। যা দেখে যেকোনো দর্শনার্থীই মুগ্ধ হবে। 

কুসুম্বা মসজিদের ৪ পাশের কোণায় কোণায় সর্বমোট ৪ টি অষ্টকোনাকার বুরুজ বা টারেট চোখে পড়বে। কুসুম্বা মসজিদের মোট গম্বুজের সংখ্যা ৬ টি। যদিও দুঃখর ব্যাপার হলো ১৮৯৭ সালের দিকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে মসজিদটির ৩ টি গম্বুজ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এর সৌন্দর্য এতোটুকুও কমেনি। মসজিদ ছাড়াও স্থাপনাটির ঠিক পাশেই রয়েছে ২৫.৮৩ একর আয়তনের একটি বিশাল জলাশয়। 

কুসুম্বা মসজিদে যেভাবে যাবেন

ইতিমধ্যেই যারা Kusumba Mosque ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আর্টিকেলের এই অংশটি তাদের জন্য। বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে কুসুম্বা মসজিদে পৌঁছাতে হলে নওগাঁ জেলায় যেতে হবে। সেখান থেকে সরাসরি চলে যাবেন মান্দা উপজেলাধীন ৮ নং কুসুম্বা ইউনিয়নের কুসুম্বা নামের গ্রামে। গ্রামটিতে রাজশাহী মহাসড়কের একটি মান্দা ব্রিজ রয়েছে৷ এই ব্রিজের পশ্চিম দিকে ৪০০ মিটার উত্তরে গেলেই দেখা মিলবে কুসুম্বা মসজিদ নামক ঐতিহাসিক স্থাপনাটিতে। 

কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করবেন

কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ মিশনে গিয়ে যদি প্রচন্ড পরিমাণে ক্ষুধার কারণে কাতর হয়ে উঠেন তবে কি করবেন? নিশ্চয় খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে নওগাঁর জনপ্রিয় বাজার দেলুয়াবাড়ি বাজারে চলে যেতে পারেন। সেখানে যেমন মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের একটি মিষ্টির দোকান চোখে পড়বে ঠিক তেমনই বিভিন্ন মিডিয়াম লেভেলের রেস্টুরেন্টের দেখাও পাবেন! বলে রাখা ভালো নওগাঁ জেলা কিন্তু মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। সুতরাং কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ করতে গিয়ে এই মিষ্টি টেস্ট করতে না পারলে আফসোস থেকেই যাবে। এছাড়াও চাইলে বাড়ি থেকেও খাবার নিয়ে আসতে পারেন। 

কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণে যেখানে রাত্রিযাপন করবেন

কোনো কারণে কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ করতে গিয়ে যদি রাত্রিযাপনে দরকার পড়ে তবে নওগাঁ জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে উঠে পড়তে পারেন। যারা ডাকবাংলোতে থাকতে পছন্দ করেন না তারা চাইলে নওগাঁ জেলায় থাকা বিভিন্ন মিডিয়াম হোটেলেও নিজের এবং ভ্রমণসঙ্গীর থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। 

ইতি কথা

কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে এই ছিলো আমাদের সম্পূর্ণ একটি গাইডলাইন। আশা করি এই ভ্রমণ গাইডলাইনটি কুসুম্বা মসজিদ সঠিকভাবে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সহযোগী হয়ে উঠবে। আর হ্যাঁ! মসজিদটি ভ্রমণের পর আপনার অনুভুতি সম্পর্কে আমাদের জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! আমরাও জানতে চাই. এই মসজিদটি ভ্রমণে আপনি কতটুকু তৃপ্ত হয়েছেন কিংবা এর স্থাপনাশৈলীটুকু আপনার কেমন লেগেছে! আজ এতোটুকুই! পরবর্তী তথ্যবহুল আয়োজনের সাথে থাকার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

" " "
"