" " "
"
ঢাকাঢাকা বিভাগবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণে যা যা দেখবেন!

বাঙালি ইতিহাসের এক অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। যা সম্পর্কে জানে না এমন কোনো বাঙালি হয়তো বাংলাদেশে নয়। তবে ব্যস্ততা কিংবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হয়তো অনেকের পক্ষেই ভ্রমণ করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে আজ আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্পর্কিত একটি ভ্রমণ গাইডলাইন সম্পর্কে জেনে নিবো। যা পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাড়তি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে এবং সঠিকভাবে ভ্রমণ মিশনটি কমপ্লিট করতে আমাদের সাহায্য করবে। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান – Sohrawardi Uddan

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিচিতি

নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এটি বাগান বা মাঠ জাতীয় কোনো দর্শনীয় স্থান! হ্যাঁ! ঠিকই ধরেছেন! সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মূলত সুবিশাল একটি মাঠ। যে মাঠটিকে ঘিরে রয়েছে বাঙালির এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। যার ফলে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান হিসেবে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনপ্রিয়তাকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। 

" " "
"

এই ঐতিহাসিক এবং জনপ্রিয় উদ্যানটি একটা সময়ে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে সারা বাংলাদেশে এই স্থানটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একের পর এক বাঙালি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ঐতিহাসিক দিক দিয়ে নিজের বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। 

স্থানটিকে একটা সময় রমনা রোস কোর্স ময়দান হিসেবে ডাকা হলেও পরবর্তীতে এটি পরিচিতি পায় রমনা জিমখানা হিসাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সবশেষে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাম এবং এখনো পর্যন্ত এর নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই রয়ে গেছে। 

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের বহু আগে অর্থ্যাৎ ব্রিটিশ আমলে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটি ব্রিটিশ সৈন্যদের সামরিক ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এর কিছু বছর পর এটির ব্যবহার চলে একটি সক্রিয় জিমখানা বা জিম সেন্টার হিসেবে। আবার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পরপর এই উদ্যানটিতে বৈধ ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো প্রতি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ্যাৎ রবিবারে। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর অবস্থান – Sohrawardi Uddan Location

মূলত বাংলাদেশের বর্তমান রাজধানী ঢাকাতেই অবস্থিত এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা পূর্বের রেসকোর্স ময়দান। স্থানটির অবস্থানগত দিক সম্পর্কে যদি আরেকটু বিস্তারিত জানাতে হয় তবে বলবো মূলত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলেই অবস্থিত এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামের ঐতিহাসিক এবং সুবিশাল মাঠটি। অনেকেই এটিকে সারাদেশের সুপরিসর নগর উদ্যান হিসেবে নামকরণ করে থাকে। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর ইতিহাস 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাস সম্পর্কে বলার ক্ষেত্রে সবার আগে যে চিত্রপটটি চোখের সামনে ভেসে আসে সেই চিত্রপট বা ঘটনাটি হলো একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। যা শোনার উদ্দেশ্য নিয়ে হাজার হাজার মুক্তিকামী বাঙালি জড়ো হয়েছিলো এই তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

তবে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্পর্কে যদি বিস্তারিত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান তবে বেশকিছু ঘটনা সম্পর্কে জানানোর প্রয়োজন পড়বে। শুরু থেকেই বলা যাক। 

সেই মুগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সুবাহদার ইসলাম খান যখন ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন ঠিক সে সময় থেকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সময়টা ইংরেজি ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। সেই সময়টাতে ব্রিটিশদের বিভিন্ন কার্যক্রমের বদৌলতে ঢাকা শহর কিছুটা উন্নতি লাভ করায় এবং জেলাটিকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় ঢাকার উত্তর শহরতলিতে দুটি চমৎকার আবাসিক এলাকা গড়ে উঠতে শুরু করে৷ 

পরবর্তীতে এই এলকাটি মহল্লা চিশতিয়া নামে পরিচিতি পেতে শুরু করে৷ যার নামকরণ করা হয়েছিলো সে-সময়কার সুবাহদার ইসলাম খান চিশতির নামে। পরবর্তীতে এই একই এলাকা বা স্থানটির নামকরণ করা হয় মহল্লা সুজাতপুর নামে। বলে রাখা ভালো এই মহল্লা সুজাতপুর নামটি মূলত এসেছে সেসময়কার সুবাহদার ইসলাম খানের একজন সেনাধ্যক্ষ সুজা খানের নামে। 

এলাকাটিতে সময় গড়াতে গড়াতে একটা সময় মসজিদ, বাগান, সমাধিসৌধ, মন্দির ইত্যাদি গড়ে উঠতে শুরু করে। এর ঠিক আশেপাশেই একটি মাঠ বা উদ্যান বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য জনপ্রিয় উঠতে শুরু করে। যা সে-সময় রমনা পার্ক হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি পেতে সক্ষম হয়েছিলো। যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঠিক একই স্থানটির নামকরণ করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে। 

ব্রিটিশ আমলের দিকে ঢাকাকে ব্রিটিশ কালেক্টর মি. ডয়েস পুরোপুরি সাজানোর কার্যক্রম হাতে নেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বন জঙ্গল পরিষ্কার করে রমনা পার্ককে একটি পরিচ্ছন্ন মাঠ হিসেবে গড়ে তুলেন। সে-সময় এই ব্রিটিশ এই কালেক্টর মাঠটিকে রমনা গ্রীন এবং এলাকাটিকে রেসকোর্স নামে নামকরণ করেন। 

ব্রিটিশ আমলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পর এবার আসি পাকিস্তানি আমলের ইতিহাস সম্পর্কে। যা রমনা ইতিহাসে বেশ গুরুত্ব বহন করছে। 

আমরা সকলেই জানি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরও আগের মতোই এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বেশ গুরুত্বের সাথে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। আবার পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বক্তৃতা প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগে একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয় এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই! আবার ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তারিখে এসেও এই ঐতিহাসিক স্থানে আরেকটি ঐতিহাসিক ভাষণের আয়োজন করা হয়। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত বেশ গুরুত্বের সাথেই আলোচিত এবং সম্মানিত করা হয় এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণে যা যা দেখবেন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মূলত একটি উন্মুক্ত মাঠ। একটি সবুজে ঘেরা পার্ক হিসেবে এই উদ্যানটি ভ্রমণে যে কারো মনে প্রশান্তির ছোঁয়া কাজ করবে। এছাড়াও স্থানটিতে রয়েছে  ‘শিখা চিরন্তন’। যা দেখার উদ্দেশ্যে নিয়মিত ভ্রমণপিয়াসীরা ভীড় জমান উদ্যানটিতে। 

সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের অন্যতম স্থাপনা হিসেবে স্বাধীনতা জাদুঘরের কথা না বললেই নয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে প্রতিকীরূপে বেশ৷ সযত্নেই সংগ্রহ করা হয়েছে এই স্বাধীনতা জাদুঘরটিতে। বলে রাখা ভালো এই জাদুঘরটি কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়ে থাকে। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেভাবে যাবেন

যারা ঢাকার তারা সরাসরি এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছে যেতে পারেন। তবে যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের প্রথমেই ঢাকা বিভাগে পৌঁছে যেতে হবে। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এবং সবশেষে চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিপরীতে চোখ ফেললেই দেখা মিলবে এই ঐতিহাসিক স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করবেন

তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণে গিয়ে যদি হুট করেই ক্ষুধা পেয়ে যায় তবে চিন্তার কিছু নেই। কেননা দর্শনীয় স্থান হিসেবে এই স্থানটির আশেপাশে অসংখ্য খাবার হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে চারুকলা ইনস্টিটিউটের আশেপাশে যেসব স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় সে-সব ট্রাই করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কেননা এসব ফুড স্বাদে অনন্য। তবে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যাক্তিরা চাইলে সোহরাওয়ার্দীর আশেপাশে থাকা ভালো কোনো খাবার হোটেল থেকে খাবারের পর্ব সেরে নিতে পারেন। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণে যেখানে রাত্রিযাপন করবেন

যারা ঢাকা থেকে সরাসরি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণ করতে যাবেন তাদের ক্ষেত্রে তো চিন্তার কিছু নেই। বিশেষ করে রাত্রিযাপনের ক্ষেত্রে তো কোনো চিন্তা নেই। তবে যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে রাত্রিযাপনের ব্যাপারটা বেশ চিন্তার। এক্ষেত্রে আপনারা চাইলে শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, সেল নিভাস কিংবা হোটেল সেভেন স্টার নামক হোটেলগুলিতে উঠে পড়তে পারেন। 

ইতি কথা

আশা করি কেবল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভ্রমণ গাইডলাইন সম্পর্কেই নয় বরং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিচিতি, অবস্থান ইতিহাসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানাতে সক্ষম হয়েছি। বাঙালি ইতিহাস এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি সম্পর্কে জানা এবং নিজ চোখে তা উপভোগ করা আসাটা আমাদের প্রত্যেকেরই জাতিগত দায়িত্ব। আশা করি এই দায়িত্ব পালনে আমরা কোনোভাবেই গাফেলের পরিচয় দিবো না।

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *