" " "
"
কিশোরগঞ্জঢাকা বিভাগবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

নিকলী হাওর কিভাবে যাবেন,কোথায় থাকবেন, ভ্রমণকালীন খাওয়া দাওয়া সহ বিস্তারিত ট্যুরিস্ট গাইড!

পর্যটকদের কাছে বিভিন্ন পর্যটন এলাকার মতো সৌন্দর্যে ভরা হাওর-বাওর ও সমতলভূমির বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতি যেনো কোনো এক সোনার খনি। নিজের মতো করে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে এসব স্থানই যথেষ্ট! মূলত আমাদের বাংলাদেশের দিগন্ত বিস্তৃত খণ্ড খণ্ড হাওরগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পর্যটকের মন ভরিয়ে তুলছে।

তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো টাঙুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, শনির হাওর, টগার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে নিয়মিত পর্যটকের চাপ লেগে থাকার ঘটনা! তেমনই এক হাওর নিকলী হাওর! চলুন তবে এই পর্যায়ে নিকলী হাওর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক। 

" " "
"

নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ – Nikli Haor Kishoreganj

নিকলী হাওর পরিচিতি

মূলত নিকলী উপজেলার হাওর এই নিকলী হাওর। যার নামকরণ করা হয়েছে নিকলী উপজেলার নাম থেকেই। মূলত কিশোরগঞ্জের এই উপজেলা থেকে হাওরটির উৎপত্তি হয়েছে। পানি এবং উপরের আকাশের এক অদ্ভুত মিলনমেলা সরাসরি নিজ চোখে উপভোগ করার উদ্দেশ্যে সারাবছরই এই পর্যটন এলাকাটিতে ভীড় লেগেই থাকে। 

নিজের ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে যারা দেশ-বিদেশের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক স্থান থেকে ঘুরে আসতে পছন্দ করেন তারা তাদের পছন্দের পর্যটন এলাকার তালিকায় নিকলী হাওরকে রাখতে পারেন। কেননা ছুটির দিন হোক কিংবা অন্যান্য সাধারণ দিন হোক, যেকোনো সময়ে বন্ধু-বান্ধব কিংবা সপরিবারে ঘুরে আসার ক্ষেত্রে Nikli Haor হতে পারে পারফেক্ট চয়েজ। 

কিশোরগঞ্জের এই হাওর মূলত সেখানকার নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা এই ৪ টি উপজেলার মাঝে বয়ে চলা বড়সড় একটি জলাধার। গ্রামীণ সাইডে হাওরটির অবস্থান হওয়ায় এখানে ঘুরতে এসে দর্শনার্থীরা সহজে গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। যারা শহরে বেড়ে উঠেছেন এবং গ্রামীণ হাওর সরাসরি উপভোগ করার সুযোগ কখনো হয়ে উঠেনি তারা জীবনে একটিবারের জন্যে হলেও ঘুরে যেতে পারেন এই নিকলী হাওরে। 

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই নিকলী হাওরে ঘুরতে গিয়ে আপনি কিছুটা দ্বীপ উপভোগের ফিলিংস পাবেন। খন্ড খন্ড গ্রাম এবং সে-সব গ্রামের মাঝখানে কোথাও কোথাও হাওরে খন্ডাংশ! এ-যেনো গ্রামের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোনো এক প্রাকৃতিক দ্বীপ! 

নিকলী হাওর কোথায় অবস্থিত – Nikli Haor Location

আগেই বলেছি অবস্থানগত দিক দিয়ে এটি কিশোরগঞ্জ জেলার একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা বা প্রাকৃতিক হাওর। মূলত এই নিকলী হাওরের উৎপত্তি ঘটেছে সরাসরি নিকলী উপজেলা থেকে। খুব বেশি বড় হাওর হওয়ায় এই হাওর পার্শ্ববর্তী মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। 

বাংলাদেশে যে ক’টি মিঠা পানির জলাধার বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সে ক’টি জলাধারের মাঝে বেশ বড়সড় একটি জলাধার হলো এই Nikli Haor। এই হাওর সারাদেশে পর্যটন এলাকা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠার পেছনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। সেটি হলো হাওরটিতে ভ্রমণ করাকালীন সময়ে ঢাকার সাথে সহজ সড়ক ও রেল যোগাযোগের ফলে যাতায়াত সম্পর্কিত চাপ একেবারেই না থাকা! 

Nikli Haor Map

নিকলী হাওর এর সৌন্দর্য 

Nikli Haor ভ্রমণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হলো হাওরটির সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এককথায় বাজিমাত করেছে এই নিকলী হাওর। তার উপর আয়তনের দিক দিয়ে বেশ বড় হওয়ায় হাওরটিকে প্রথম দেখাতেই ভালোবাসতে সক্ষম হোন দর্শনার্থীরা। 

বিশেষ করে নিকলী হাওরে বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রাম থাকার ব্যাপারটি দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। মনে হয় ছোট ছোট এক একটি দ্বীপ রাষ্ট্রের মাঝে ঘোরাঘুরি করছেন আপনি। এছাড়াও এই হাওরটিতে দেখা মিলবে অসংখ্য হিজল গাছের। এসব গাছের অর্ধেক কিংবা কখনো কখনো পুরো অংশটাই পানির মাঝে ডুবে থাকে। ফলে দেখতে বেশ সুন্দর দেখায়। 

এছাড়াও যারা Nikli Haor এখনো ভ্রমণ করতে পারেননি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে হাওরটির পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বনের চমক। সাথে ফ্রিতে থাকছে শুশুকের লাফ-ঝাঁপ দেখার সুযোগ। যারা এখনো পর্যন্ত কাছ থেকে শুশুক দেখার সুযোগ পাননি এই নিকলী হাওর ঘুরে আসার সুযোগে শুশুককেও কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন। 

নিকলী হাওরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে যারা বেছে নিবেন তারা নিশ্চয় নৌকা করে ঘুরতেও পছন্দ করবেন। কেননা সাইকোলজির লজিক অনুযায়ী হাওর, সমুদ্র, ঝর্ণা, নদী ইত্যাদি ভালোবাসা বেশিরভাগ ভ্রমণপিয়াসীরাই নৌকায় করে ঘুরে-বেড়াতে পছন্দ করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো নিকলী হাওরে নৌকা করে সারা হাওর ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। চাইলে আপনিও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেশ কাছ থেকেই পুরো হাওর উপভোগ করে নিতে পারেন। 

যারা গ্রামীণ পরিবেশ খুব বেশি পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে ফ্রি সময়টাকে উপভোগের জন্য এই Nikli Haor হতে পারে সেরা একটি পর্যটন এলাকা। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং গ্রামীণ ধাঁচে সাজানো গোছানো এই হাওর দেখলেই আত্মা প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। বিশেষ করে ঢাকা-শহরের যানজটে বিরক্ত হয়ে যাওয়া দর্শনার্থীদের কাছে নিকলী হাওর যেনো স্বর্গসুখের উৎসস্থল! 

Nikli Haor উপভোগের ক্ষেত্রে যদি কোনো স্পেসিফিক শ্রেষ্ঠ সময় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তবে আমি বলবো বর্ষাকালের কথা। কেননা এই বর্ষাকালে নিকলী হাওর পানিতে টইটুম্বুর হয়ে থাকে। যার ফলে দেখতে বেশ তরুণ মনে হয় হাওরটিকে। যদিও সারাবছরই এতে পানির রাজত্ব চলে। তবে বর্ষাকালের মতো শ্রেষ্ট সময়, অন্তত নিকলী হাওর উপভোগের ক্ষেত্রে… আর কোনোটাই হতে পারে না! 

নিকলী হাওরে যেভাবে যাবেন

বর্ণনা শুনেই যারা Nikli Haor ভ্রমণের প্রতি লোভে লাল হয়ে গেছেন তারা দ্রুত জেনে নিন কিভাবে এই নিকলী হাওরে পৌঁছানো যায় সে-সম্পর্কে। 

নিকলী হাওরে পৌঁছাতে হলে সবার আগে আপনাকে পৌঁছাতে হবে কিশোরগঞ্জে। যারা ঢাকা থেকে রওনা দিবেন তারা পুলেরঘাটের পথটি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে দিনে দিনে নিকলী হাওর ঘুরে আসাটা সহজ হবে। সবশেষে পুলেরঘাট থেকে আপনাকে চলে যেতে হবে নিকলী বেড়িবাঁধে! এক্ষেত্রে পুলেরঘাট থেকে নিকলী বেড়িবাঁধে পৌঁছাতে সিএনজি কিংবা অটোরিকশার সাহায্য নিতে পারেন। সময় লাগতে পারে প্রায় ১ ঘন্টার মতো এবং ভাড়া ৮০-১২০ টাকার ভেতরে৷ 

আর যারা বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে Nikli Haor ভ্রমণে যেতে চান তারাও সেইম প্রসেসে পৌঁছে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে সরাসরি কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট এবং সেখান থেকে নিকলী হাওর বেড়িবাঁধ চলে গেলেই হবে। 

নিকলী হাওর ভ্রমণে খাওয়া-দাওয়া যেখানে করবেন

এবার আসি খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে। ভ্রমণে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা না করে ভ্রমণে যাওয়ার আগে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নিন Nikli Haor ভ্রমণের ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব কিভাবে সারবেন সে-সম্পর্কে। 

নিকলী হাওরের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো সেখানকার মাছ। কোনো ধরণের ক্যামিকাল ছাড়াই এই মিঠাপানির প্রাকৃতিক মাছের স্বাদ আপনি অন্য কোনো বড় হোটেলের খাবারে পাবেন না। যারা নৌকাতে নিজেরাই রান্নার আয়োজন করতে চান তারা মাছের ব্যবস্থা করে নৌকাতেই রান্না করে নিতে পারেন। এছাড়াও স্থানীয় বাজার থেকেও মাছ সংগ্রহ করে নিতে পারেন। 

পাশাপাশি নিকলী ভ্রমণে গিয়ে মাত্র যেখানে নামবেন অর্থ্যাৎ নিকলী হাওর বেড়িবাঁধের দিকে বেশ ভালো ভালো খাবার হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল থেকেও খাবারের পর্ব সেরে নিতে পারেন। 

নিকলী হাওর রিসোর্টনিকলী হাওর ভ্রমণে যেখানে রাত্রিযাপন করবেন

যারা Nikli Haor ভ্রমণে নিয়ে একদিনের বেশি থাকতে চান তাদের জন্য আর্টিকেলের এই পর্বটি। 

শুরুতেই বলে রাখি নিকলী হাওরে ভালো কোনো থাকবার মতো হোটেল নেই। যারা নৌকাতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা নৌকাতেই নিজেদের থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। এছাড়াও নিকলী উপজেলায় বেশকিছু ডাক বাংলো রয়েছে। এসব ডাক বাংলো পছন্দ হলে সেখানেই রাত কাটিয়ে ফেলতে পারেন। পাশাপাশি সেখানে নতুন কার্যক্রম শুরু হওয়া চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজে থাকতে পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো হয় যদি নৌকায় ক্যাম্পিং করে থাকা যায়! 

ইতি কথা 

Nikli Haor নিয়ে এই ছিলো আমাদের আলোচনা! আশা করি পরবর্তীতে ট্যুর প্ল্যানিংয়ে অবশ্যই শুরুতেই নিকলী হাওরের নাম থাকবে। কেননা সৌন্দর্যে ভরা এই পর্যটন এলাকাটি মিস করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *