" " "
"
চট্টগ্রাম বিভাগদর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডরাঙ্গামাটি

কাপ্তাই লেক যেভাবে যাবেন ট্যুরিস্ট গাইড! (Kaptai Lake)

আপনি যদি একজন ভ্রমণপিয়াসী হয়ে থাকেন তবে নিশ্চয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রতি আপনার মারাত্মক লোভ কাজ করে। এটাই স্বাভাবিক! কেননা দর্শনীয় স্থানগুলি একটি মানুষকে যতটা তৃপ্ত করতে পারে অন্য কোনো মাধ্যমে তা হয়তো কখনোই সম্ভব হয় না। ঠিক তেমনই একটি তৃপ্তিময় স্থান হলো কাপ্তাই লেক।

যারা ফ্রি টাইমে পাহাড়, জল এবং মেঘের খেলায় নিজেকে হারাতে চান কাপ্তাই লেক ভ্রমণ তাদের জন্য একটি আদর্শ প্ল্যানিং হতে পারে। তবে প্রকৃতির এই অনন্য দান কাপ্তাই লেকে ছুটি পেলেই পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে হলে স্থানটি সম্পর্কে দরকারী তথ্য জানা থাকতে হবে। যা আজকের এই আর্টিকেলে আমরা তুলে ধরবো। সুতরাং সাথেই থাকুন। 

" " "
"

কাপ্তাই লেক – Kaptai Lake

কাপ্তাই লেক পরিচিতি

শুরুতেই কাপ্তাই লেকের পরিচিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মূলত বাংলাদেশের বৃহত্তম হ্রদ হলো কাপ্তাই লেক। যা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। ধারণা করা হয় এটি এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ কৃত্রিম লেক। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই লেক তৈরির ইতিহাসটি। মূলত একটি এক্সিডেন্টের ভিত্তিতে এই লেক সৃষ্টি হয়েছিলো। যা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই এখনো জানে না। তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে “ইতিহাস” পার্টটিতে আমরা এর গল্প সম্পর্কে জানবো। 

যা বলছিলাম! কাপ্তাই লেকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর ধারণার চেয়েও অনেক বেশি বিশালতা। আয়তনের দিক দিয়ে সাধারণ লেকের তুলনায় এই কাপ্তাই লেকের পরিমাপ অনেক বেশি। যার ফলে পর্যটকদের কাছে এক বাড়তি বিস্ময় হিসেবে ধরা দেয় লেকটির বিশালতা। 

লেকটি কৃত্রিমতার সাথে তৈরি হলেও এর আশেপাশে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিন্তু যেকারোই মন মাতাতে একাই একশো। বলছিলাম কাপ্তাই লেকের সবুজে ঘেরা পাহাড়ি ঝর্ণা, আঁকাবাঁকা রাস্তা এবং ছোট ছোট পাহাড়ের অপার সৌন্দর্যের কথা। যা লেকটিকে দর্শনার্থীদের কাছে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে। পর্যটকেরা লেকটি উপভোগ করতে গিয়ে একদিকে যেমন পাহাড়গুলোতে থাকা সবুজে ঘেরা গাছের সমারোহ দেখতে পাবেন, ঠিক তেমনই অপরদিকে লেকের জলে থাকা বহু প্রজাতির মাছও তাদের অবাক করে তুলবে। 

সেই সাথে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো কাপ্তাই লেকে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। শুধু লেকই নয়! এক ঢিলে বহু পাখি মারার মতো একইসাথে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানও উপভোগ করা হয়ে যাবে এখানে। যা একজন ভ্রমণপিয়াসীর কাছে বাড়তি উপহারের চাইতে বেশিকিছু মনে হতে পারে। 

কাপ্তাই লেক কোথায় অবস্থিত – Kaptai Lake Location

অবস্থানগত দিক দিয়ে কাপ্তাই লেক হলো চট্টগ্রামের একটি পর্যটন এলাকা। যা রাঙামাটির সম্পদ! রাঙামাটি জেলায় প্রায় ১১,০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই লেক এশিয়াসহ সারাবিশ্বের অসংখ্য পর্যটককে তৃপ্ত করে চলেছে। এছাড়াও এই লেক বাংলাদেশের বৃহত্তম লেক হিসেবে সারাদেশে নিজের জনপ্রিয়তাকে ধরে রেখেছে নিজস্ব সৌন্দর্য দ্বারা। 

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন কাপ্তাই হ্রদ বা লেক হলো মূলত কর্ণফুলী হ্রদের আঞ্চলিক নাম। মূলত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এই লেকটি কাজে লাগাচ্ছে তার নিজম্ব উঁচু-নিচু পাহাড়-পর্বত, পাহাড়ি ঝরনাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, অথৈ পানির ঢল, সবুজের সমারোহ, গাঢ়-সবুজ বন, গাছ-গাছালির মেলা, ফুল-ফল আর উপজাতিদের জীবনধারা। 

এছাড়াও এর অবস্থান রাঙামাটিতে হওয়ায় ভ্রমণপিয়াসীরা একই সাথে অসংখ্য পর্যটন এলাকা ঘুরে আসার সুযোগ পায়। কাপ্তাই লেকের পাশাপাশি বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চল, পাহাড়ি পরিবেশ একসাথে উপভোগ করার একটি আদর্শ পর্যটন স্থান এই স্থানটি। 

কাপ্তাই লেকের ইতিহাস – Kaptai Lake History

এবার আসি কাপ্তাই লেকের ইতিহাস সম্পর্কে। সময়টা ১৯৫৬ সাল। সে-সময় পাকিস্তান সরকার পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কর্ণফুলি নদীর উপর একটি লেক তৈরির প্ল্যানিং করে। পরবর্তীতে সেই প্ল্যানিং অনুযায়ী তৈরিও হয়ে যায় আজকের এই কাপ্তাই লেক। যদিও এটি তৈরি করতে গিয়ে খুব একটা কাজ করতে হয়নি কতৃপক্ষের। কেননা ৫৪ হাজার একর জমি ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়ে গেছে। যার প্লাবনে কাপ্তাই লেক তৈরি হতে গিয়ে খুব একটা জটিলতার মুখে পড়তে হয়নি কিংবা পানির ব্যবস্থা, স্থান খনন ইত্যাদির মতো বাড়তি কাজও করতে হয়নি। 

তবে কিছুটা এক্সিডেন্ট কিংবা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হলেও এই লেকের সৌন্দর্য বর্ধনে বেশকিছু কাজ করতে হয়। যার পেছনে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে। মূলত আমেরিকান অর্থায়নেই কাপ্তাই লেকের প্রয়োজনীয় খরচ বহন করা হয়েছে। সব কাজ শেষে পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে এই লেক। মূলত একটি কৃত্রিম লেকের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ঘিরে থাকার ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে পর্যটকদের। 

কিছুটা প্রকৃতির দান এবং কিছুটা কৃত্রিম ব্যবস্থার ফলে লেকটি হয়ে উঠেছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় লেক। এই লেকটি তৈরির সময় বাড়তি সময় নেওয়ার ফলে পর্যটন এলকা হিসেবে এটিকে যথেষ্ট পারফেক্টলি তৈরি করার ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে কৃত্রিম সৌন্দর্যের মিশ্রনের ফলে এখনো এক পর্যটক বারবার স্থানটিতে ভ্রমণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না! 

কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য 

ইতিমধ্যেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য যে কারো মন মাতাতে যথেষ্ট! পাশাপাশি এ-কথাও শতভাগ সত্য যে কাপ্তাই লেকে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে! সুতরাং খুব সহজেই একইসাথে আপনি অনেকগুলি পর্যটন এলাকা ঝামেলা ছাড়াই উপভোগ করতে পারবেন। 

কাপ্তাই লেকে ঘুরতে যাওয়ার সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হলো নৌকা করে পুরো লেক ঘুরে আসার সুযোগ। অনেকক্ষেত্রেই লেক ঘুরে দেখার সময়-সুযোগ যাদের হয়ে উঠে না তারা কাপ্তাই লেক ট্যুর প্ল্যানিং নৌকা করে লেক ঘুরে আসার ব্যাপারটিকেও রাখতে পারেন। আশা করি আনন্দ লাভের দিক দিয়ে মোটেও নিরাশ হবেন না। পাশাপাশি যারা স্পিডবোটে চড়তে পছন্দ করেন তারাও পাচ্ছেন স্পিডবোটে চড়ে পুরো কাপ্তাই লেক ঘুরে আসার সুযোগ। এমন সুযোগ ক’টা পর্যটন এলাকায় পাবেন বলুন তো!

কাপ্তাই লেকের ঝুলন্ত ব্রিজ সম্পর্কে জানে না এমন কোনো বাংলাদেশী হয়তো নেই! ঝুলন্ত এই অবাক করা ব্রিজটি যদি আপনিও উপভোগ করতে চান তবে আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে সরাসরি কাপ্তাই লেকে। উপরের মেঘযুক্ত আকাশ, নিচের স্বচ্ছ লেকের পানি এবং আশপাশের সবুজের সমারোহ একসাথে উপভোগ করার এ-যেনো এক অনন্য উপায়। 

এছাড়াও যারা পিকনিক টিম হিসেবে বা কাপ্তাই লেকে গিয়ে পিকনিক করা প্ল্যানিং করে যাবেন তারা চাইলে এর পিকনিক স্পটকে কাজে লাগাতে পারেন। প্যারাডাইস পিকনিক স্পট এই স্থানটি ঘুরে আসতে না পারলে অনন্য সৌন্দর্য মিস করতে হবে আপনাকে। সুতরাং কোনোভাবেই মিস করবেন না যেনো!

এছাড়াও কাপ্তাই লেকে যা যা দেখবেন তাদের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন স্থান হলো শুভলং ঝর্ণা। যদিও কাপ্তাই লেকের আশেপাশের এরিয়াতে অসম্ভব সুন্দর সুন্দর ঝর্ণার কোনো অভাব নেই! তবে শুভলং ঝর্ণা কিন্তু সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বেশি মার্ক পেয়ে সবসময়ই এগিয়ে থাকবে। কেনো বলছি? কারণ…. এই ঝর্ণা খুবই কাছ থেকে দেখার সুযোগ থাকার ফলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে একটি পাহাড়ি ঝর্ণা কতটা মন মাতানো হতে পারে তা বুঝতে পারা যায়। 

কাপ্তাই লেকে যেভাবে যাবেন

কাপ্তাই লেকের গল্প শুনতে শুনতে হয়তো ইতিমধ্যেই আপনার এই পর্যটন স্থানটি উপভোগ করার ইচ্ছে জেগে উঠেছে? তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে পৌঁছাবেন এই অনন্য সুন্দর লেকটিতে! 

যারা ঢাকা থেকে যেতে চান তারা সরাসরি বাসে করে ৮/৯ ঘন্টায় সময় নিয়ে রাঙামাটি কিংবা চট্টগ্রামে পৌঁছে যেতে পারেন। চট্টগ্রাম পৌঁছানো পর্যটকেরা বদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই বাস ধরে সরাসরি লেকটিতে পৌঁছে যেতে পারেন। 

আর যারা সারাদেশের যেকোনো স্থান থেকে কাপ্তাই লেকে ঘুরতে যেতে চান তারাও নির্দিষ্ট স্থান থেকে একইভাবে বাসে করে চট্টগ্রামে পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে সরাসরি কাপ্তাই বাস এবং লোকাল সিএনজি বা পায়ে হেঁটে সরাসরি চলে যাবেন কাপ্তাই লেকে। 

ইতি কথা

কাপ্তাই লেক পরিচিতিসহ সম্পূর্ণ তথ্য নিয়ে সাজানো আমাদের এই আয়োজন কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! আর হ্যাঁ! কাপ্তাই লেক ভ্রমণ সম্পর্কিত প্ল্যানিংটাও চাইলে শেয়ার করতে পারেন। পৃথিবীর অনন্য এই দর্শনীয় স্থানটিতে ঘুরে আসার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

আরও তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *