ট্রেনের সময়সূচীবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী | টিকিটমূল্য | স্টপেজ | সুবিধাসমূহ

এই বাড়তি খরচের যুগে আমরা অনেকেই ট্রেনের মাধ্যমে যাতায়াত করার ব্যাপারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়তি পথ পাড়ি দিতে ট্রেনের যেনো জুড়ি মেলাটাই ভার। যাত্রীদের সুবিধা এবং দেশের উন্নয়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারসহ বেসরকারি কিছু কতৃপক্ষ নিজেরাই বিভিন্ন ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। ঠিক তেমনই একটি ট্রেন হলো এই একতা এক্সপ্রেস ট্রেন। চলুন তবে আজ এই ট্রেনটি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। জানা যাক একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সহ এ-সম্পর্কিত বাড়তি তথ্য। 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী – Ekota Express Train Schedule

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচিতি

শুরুতেই আমরা জানবো একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচিতি সম্পর্কে। যারা আনন্দদায়ক এবং নিরাপদ ট্রেন জার্নি পছন্দ করেন তাদের জন্যে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন হতে পারে পারফেক্ট চয়েজ। বলে রাখা ভালো একতা এক্সপ্রেস ট্রেন একটি আন্তঃনগর ট্রেন। যা বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিষেবার আন্ডারে সেবা দিয়ে আসছে। 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী নিয়ে আলোচনা করবার আগে জানাতে চাই, তাপানুকুল স্লিপার, তাপানুকুল চেয়ার, শোভন চেয়ার…মোট এই তিনটি শ্রেণীতে এই ট্রেনকে ভাগ করা হয়েছে। এর বেশ সুন্দর এবং পারফেক্ট আসন বিন্যাস আপনার ভ্রমণ কিংবা যাতায়াতকে আরো অর্থবহ করে তুলবে। আর যদি এই ট্রেনের গতিবিধি সম্পর্কে জানতে চান তবে বলবো একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১ ঘন্টার গতি প্রায় ১০০ কিলোমিটারের মতো। 

মূলত একতা এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেনটি প্রতিদিন প্রায় ১২০০ যাত্রী বহন করে থাকে। ইতিমধ্যেই এই ট্রেনটি বাংলাদেশ সবচেয়ে ব্যায়বহুল ট্রেন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাশাপাশি পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রেনটির দ্রুততাও বেশ সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্যক্রম

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা মূলত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে পঞ্চগড় রেলস্টেশনে গিয়ে শেষ হয়। এই যাত্রায় প্রতিদিন ট্রেনটি ১৯ টি স্টপে ১৯ বার যাত্রা বিরতির সময় কাটানোর সুযোগ পায়। ট্রেনটি প্রতিদিন সর্বমোট ৫২৬ কিলোমিটার বা ৩২৭ মাইল পথ অতিক্রম করে থাকে। এতে করে সময় হিসেবে খরচ হয় ১০ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের মতো। 

বলে রাখা ভালো এই ট্রেনের কার্যক্রম কিন্তু প্রতিদিনই পরিচালিত হয়। খাদ্য সুবিধা থাকার পাশাপাশি রেল নং ৭০৬ / ৭০৫ এর এই ট্রেনটিতে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ওভারহেড রেকের পাশাপাশি এতে রয়েছে যাত্রাকালীন সময়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা। 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকেশন

মূলত একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকেশন সম্পর্কে যদি বলি তবে বলবো শুরুতে এটি দিনাজপুর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করতো। তবে পরবর্তীতে এই চলাচলের মাধ্যমটিকে কিছুটা বাড়িয়ে পঞ্চগড় রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ এবং সময়সূচি 

যারা একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে যাতায়াত করতে চান তাদের একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ এবং সময়সূচি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। এতে করে কোন স্টপেজের সময় কি এবং কোথায় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন। চলুন তবে এ-সম্পর্কিত পয়েন্টগুলিতে ফোকাস করা যাক। 

  • সেতাবগঞ্জ রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৯ঃ৩৫ এবং দিনাজপুর থেকে ২২ঃ৩২
  • পীরগঞ্জ রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৯ঃ৫১ এবং দিনাজপুর থেকে ২২ঃ১৬
  • ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ২০ঃ১৫ এবং দিনাজপুর থেকে ২১ঃ৫১
  • বিরামপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৭ঃ৩৬ এবং দিনাজপুর থেকে ০০ঃ৪২
  • সান্তাহার রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৬ঃ০০ এবং দিনাজপুর থেকে ০২ঃ১০
  • বিমান বন্দর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১০ঃ৩৭ এবং দিনাজপুর থেকে ০৭ঃ২৫
  • জয়দেবপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১১ঃ০৫ এবং দিনাজপুর থেকে ০৬ঃ৫০
  • টাঙ্গাইল রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১২ঃ০৫ এবং দিনাজপুর থেকে ০৫ঃ৪৬
  • বি-বি-পূর্ব রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১২ঃ২৭ এবং দিনাজপুর থেকে ০৫ঃ২৪
  • শহীদ এম মনসুর আলী রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৩ঃ০৪ এবং এর জার্নি ততটুকুতেই শেষ
  • ঈশ্বরদী রেলস্টরশন ঢাকা থেকে ১৪ঃ২০ এবং এর জার্নি ততটুকুতেই শেষ
  • নাটোর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৫ঃ১০ এবং দিনাজপুর থেকে ০৩ঃ১২
  • আক্কেলপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৬ঃ২৫ এবং দিনাজপুর থেকে ০১ঃ৩৫
  • জয়পুরহাট রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৬ঃ৫৩ এবং দিনাজপুর থেকে ০১ঃ১৮
  • পাঁচবিবি রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৭ঃ০৬ এবং দিনাজপুর থেকে ০১ঃ০৬
  • ফুলবাড়ি রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৭ঃ৫০ এবং দিনাজপুর থেকে ০০ঃ২৮
  • পার্বতীপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৮ঃ১৫ এবং দিনাজপুর থেকে ২৩ঃ৫০
  • চিরিরবন্দর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৮ঃ১৪ এবং দিনাজপুর থেকে ২৩ঃ২৯
  • দিনাজপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৯ঃ০০ এবং দিনাজপুর থেকে ২৩ঃ০৪
  • রুহিয়া রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ২০ঃ৩৩ এবং দিনাজপুর থেকে ২১ঃ৩৪
  • কিসমত রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ২০ঃ৪০ এবং দিনাজপুর থেকে ২১ঃ২৫

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট

আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট সম্পর্কে। যারা এই ট্রেনটির সাহায্যে যাতায়াত করতে চান তাদের একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচীর পাশাপাশি একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। মূলত এই ট্রেনটির সর্বমোট সিটের সংখ্যা হলো ৮৩৪। এরমধ্যে: 

  • এসি সিট হলো ৪০ টি
  • এসি চেয়ার হলো ৭০ টি
  • প্রথম সিট হিসেবে ৪৮ টি সিট
  • শোভন চেয়ার সংখ্যা সর্বমোট ৬৭৬ টি
  • এবং সেতু পূর্ব-শোভন চেয়ার ১৬ টি

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকেই আপনি একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কিনে নিতে পারবেন। এছাড়াও যারা এই একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের ব্যবস্থা ঘরে বসেই সেরে নিতে চান তারা মোবাইল এসএমএস সিস্টেমের সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে ডায়াল করতে হবে *১৩১#। 

যারা এই ট্রেনটির মাধ্যমে যাতায়াত করতে চান তারা অবশ্যই যাতায়াত করার অন্তত ৩০ মিনিট আগেই টিকিটের ব্যবস্থা করে নিবেন৷ এক্ষেত্রে চাইলে সর্বোচ্চ ১০ দিন আগে থেকেই টিকেট বুক করে রাখা যায়। আর যারা এসএমএস সার্ভিসটি পছন্দ করছেন না তারা সরাসরি অনলাইন সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে টিকেট বুক করে তার কপি প্রিন্টআউড করে নিলেই কাজ শেষ! 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া

এবার আজকের আর্টিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অর্থ্যাৎ একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়ার ব্যাপারে। সিট অনুযায়ী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়ার পরিমাণ হলো: 

  • ট্রেনটির প্রতিটি এসি সিটের দাম ৬২০/-
  • স্নিগ্ধ সিটের দাম ৭৭৫/-
  • এসি বার্থ ১৩০৫/-
  • শোভন চেয়ার সিটের দাম ৪৮৫/- করে
  • প্রথম বার্থ সিট ৮৭০/- 
  • নরমাল এসি সিট ৮৭০/-

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী – Ekota Express Train Schedule

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে যারা জানতে চান তাদের শুরুতে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় সম্পর্কে জানানো উচিত। এক্ষেত্রে ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা ছেড়ে যায় সকাল ১০.০০ মিনিটে। 

ঢাকা টু দিনাজপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাজে ৬.৫৫ মিনিট। সেখান থেকে পঞ্চগড়ে পৌঁছাতে গিয়ে বেজে যায় রাত ৮.৫৫ মিনিট। আবার পঞ্চগড় ছাড়ে রাত ৯.০০ মিনিটে এবং সেখান থেকে দিনাজপুরে পৌঁছায় রাত ১১.০০ মিনিটের দিকে। সবশেষে দিনাজপুর টু ঢাকায় ব্যাক করে পরবর্তী সকাল ৮.১০ মিনিটে। 

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের বন্ধের দিন – Ekota Express Train off Day

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের মূলত কোনো অফ ডে নেই। এটি প্রতিদিনই যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজ করে থাকে। সুতরাং সপ্তাহের যেকোনো দিন আপনি এই ট্রেনের মাধ্যমে যাতায়াত করতে পারেন। তবে বছরের ২ ঈদের দিন এটি অফ থাকে।

ইতি কথা

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাজানো ছিলো আমাদের আজকের এই আয়োজন। যারা ট্রেন জার্নি পছন্দ করেন তাদের জন্যে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস বেশ উপভোগ্য মনে হবে। যারা জীবনে কখনোই ট্রেন জার্নি করেননি তারাও একটিবারের জন্যে হলেও একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের জার্নি উপভোগ করার চেষ্টা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *