সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley) কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন বিস্তারিত তথ্য জানুন!
সাধারণত বলা হয়ে থাকে ২৪ ঘন্টায় সাজেককে অসংখ্য রূপে দেখতে সক্ষম হন দর্শনার্থীরা। সাজেক ভ্যালি এর সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য বিষয় হলো খুব কাছ থেকে মেঘ দেখতে পারা। যদিও বলে রাখা ভালো এটি কোনো মেঘ নয়। শুধুই কুয়াশা।
তবুও খালি চোখে দর্শনার্থীরা একে মেঘই মনে করতে করতে পুরো ভ্রমণটাকে উপভোগ করতে ভুল করে না। সে যাইহোক! মেঘ হোক কিংবা কুয়াশা… এতে কোনো জটিলতার প্রশ্ন কিংবা বিরোধিতা নেই। পর্যটকের কাছে জটিলতা কেবল সাজেক ভ্যালির অসংখ্য রূপের। মূলত একটি স্থান নিজেকে ২৪ ঘন্টায় কতভাবে সাজাতে পারে তা উপভোগ করতেই সাজেকে ভীড় করে অসংখ্য দর্শনার্থী!
সাজেক ভ্যালি – Sajek Valley
সাজেক ভ্যালি পরিচিতি
মূলত সাজেক নদী থেকে সাজেক ভ্যালির নামের সৃষ্টি হয়েছে। সাজেক ভ্যালির পরিচিতি সম্পর্কে খুব একটা জানানোর বোধহয় প্রয়োজন পড়বে না। কেননা এই স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবে বর্তমানে দেশে-বিদেশে এতোটাই জনপ্রিয় যে, সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য জানে না এমন কোনো ভ্রমণপিয়াসীকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবুও যারা কোনো নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট কারণে এই সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানটি সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্যই মূলত আর্টিকেলের এই অংশটি।
এককথায় সাজেক মূলত মেঘেদের রাজ্য। কাছ থেকে মেঘ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা টেলিস্কোপ হিসেবেও ধরে নিতে পারেন এই সাজেককে। যেখানে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে মেঘেদের উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি ফ্রিতে পাওয়া যায় সবুজাভ পরিবেশ। সব মিলিয়ে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে এই স্থানটি। সাধারণত পাহাড়ের চুড়া টাইপের একটি স্থান এই সাজেক ভ্যালি। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিটি পর্যটক প্রভাত এবং প্রাতঃবেলায় সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার সুখানুভূতি উপভোগ করে।
মূলত পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় দীঘিনালা, উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদুর মাঝখানে আপনমনে দাঁড়িয়ে আছে এই সাজেক ভ্যালির উঁচু চূড়াটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুটের মতো। আগ্রহী পর্যটকেরা আর্মি ক্যাম্প এবং বাগাইহাট পুলিশের অনুমতি নিয়ে তবেই এলাকাটিতে প্রবেশ করতে পারে৷
সাজেক ভ্যালির অবস্থান – Sajek Valley Location
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এই Sajek Valley মূলত চট্টগ্রাম জেলার জনপ্রিয় একটি পর্যটন এলাকা৷ ৭০২ বর্গমাইলের এই সাজেক ভ্যালি ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত একটি পর্যটন এলাকা। বলে রাখা ভালো রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া, এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত এই সাজেক উপজেলা! যার এটি অংশ অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা ভরপুর। যেখান থেকে দাঁড়িয়ে কাছের মেঘ সহজে উপভোগ করা যায়। মূলত এই উঁচু স্থানটি নামই সাজেক ভ্যালি। খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার এবং খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকেই সাজেক ভ্যালি দ্রুত এবং সহজে পৌঁছে যাওয়া যায়।
সাজেক ভ্যালির পেছনের গল্প
প্রিয় পাঠক, আপনি কি সাজেক ভ্যালির ইতিহাস বা পেছনের গল্প সম্পর্কে জানেন? না জানলে তবে জেনে নিন।
আগেই বলেছিলাম সাজেক কয়েকটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত একটি উপজেলা। এসব পাড়ার মধ্যে অন্যতম একটি পাড়ার নাম হলো রুইলুই পাড়া। যা ১৮৮৫ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় ১৮ শতকের বহু আগে থেকেই জনবসতিতে সরগরম ছিলো এই সাজেক উপজেলা এবং সাজেক ভ্যালি নামক সেই পর্যটন স্থানটি!
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য সম্পর্কে বলার মতো কোনো ভাষা নেই। কেননা এর সৌন্দর্য কেবল নিজ চোখে দেখে উপভোগ করা যায়! মোটকথা এই সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করে বলবার মতো নয়!
আপনি কি জানেন, সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়? এই স্থানটিকে রাঙামাটির ছাদ বলার অন্যতম কারণ হলো এখানে দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপজেলা এবং উপরের আকাশ, মেঘ সবকিছু একসাথে উপভোগ করা যায়।
পাহাড়ি জীবনযাপন সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সকলেই কম-বেশি জানি। সেখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবনযাপন কিছুটা আলাদা হওয়ায় এর প্রতি আমাদের প্রচন্ড আগ্রহ কিংবা কৌতূহল কাজ করে। সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা গলিতে বাস করা উপজাতিদের জীবনযাত্রা উপভোগ করারও সুযোগ থাকে।
সাজেক যাওয়ার পথে অর্থ্যাৎ খাগড়াছড়ি থেকে চান্দের গাড়িতে চড়ার সময় দেখা মিলবে পাহাড়ের সহজ-সরল মানুষের! যারা কিনা দেবদূত হিসেবেই বেশ পরিচিত।
সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজে ভরপুর এই সাজেক সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য পার্ফেক্ট। এছাড়াও সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া অর্থ্যাৎ কংলাক পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রকৃতির রাণী হিসেবেও হারিয়ে ফেলা যায়। এছাড়াও যাত্রাপথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়ের সৌন্দর্য তো আছেই!
সাজেক ভ্যালিতে যেভাবে যাবেন
আপনার কি সাজেক ভ্যালি যেতে খুব ইচ্ছে করছে! কিন্তু কিভাবে যাবেন তা এখনো পর্যন্ত ঠিক করতে পারছেন না! এমন পরিস্থিতিতে পড়ে থাকলে তবে জেনে নিন সাজেকে যাওয়ার গন্তব্য নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ধরে সাজেক ভ্যালিতে যাওয়াটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কেননা এই কম সময়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছানো যায়। এক্ষেত্রে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরে এসে চান্দের গাড়ি ভাড়া করে খুব সহজেই সারা সাজেক চষে বেড়াতে পারেন। তবে হ্যাঁ! পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথের জন্য সিএনজি খুব বিপজ্জনক হওয়াতে শুধুমাত্র চান্দের গাড়ির ব্যাপারে বললাম!
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করবেন
পাহাড়ি ডাবের পানির অমৃত স্বাদ এবং জুম চাষের মাধ্যমে বেড়ে উঠা মিষ্টি পেঁপে উপভোগ করতে চাইলে সবার আগে আমি সাজেস্ট করবো সাজেক ভ্যালি নামক পর্যটন স্থানটিকে। বলে রাখা ভালো সাজেকে রান্না করা কোনো খাবার কিন্তু আপনি পাবেন না। সুতরাং যারা সাথে করে খাবার নিয়ে যাবেন না কিংবা সাজেকের খাবার টেস্ট করতে চান তারা খাবার গ্রহণের ঠিক ১ থেকে ২ ঘন্টা আগেই অর্ডার করে রাখবেন। যারা সাজেকে ঘুরাঘুরি করার ক্ষেত্রে জীপ গাড়ির সাহায্য নিবেন ভাবছেন তারা জীপ গাড়ির ড্রাইভারকে খাবার কিনে এনে দিতে বলতে পারেন৷ দীঘিনালা থেকে যেকোনো খাবার কিংবা পানীয় কিনে নিতে পারেন বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে!
Sajek Valley Resort
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যেখানে রাত্রিযাপন করবেন
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে গিয়ে একদিনের মাঝে পুরো উপজেলার সৌন্দর্য উপভোগ করাটা বড্ড কঠিন মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে কয়েকদিন সময় নিয়ে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানটি ঘুরে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে রাত্রিযাপনের একটা বিষয় থাকে।
বর্তমানে সাজেক উপজেলাটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠায় এর আশেপাশে থাকার মতো অসংখ্য হোটেলের দেখা মিলবে। এসব হোটেলে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বাজেটে রাত কাটানোসহ ভালোমানের খাবার-দাবারও পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি চাইলে আদিবাসীদের অনুমতি নিয়ে তাদের কটেজেও রাত কাটাতে পারেন৷
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের বাড়তি টিপস
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের বাড়তি কিছু টিপস সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক। এসব টিপস আপনার ভ্রমণকে আরো পরিপূর্ণ করে তুলবে। টিপসগুলি এগুলি হলো:
- ছুটির দিনে যারা কটেজ পেতে চান তারা অবশ্যই ১ মাস আগে থেকে বুকিং করে রাখবেন
- সাজেক ভ্যাল ভ্রমণে জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে রাখা ভালো
- মোটরসাইকেল করে যাওয়া পর্যটক কিংবা বাইকারেরা সতর্কতার সাথে রাইডিং করবেন
- চান্দের গাড়ির ছাদে বসার প্রয়োজন পড়লে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন
- অনুমতি ছাড়া স্থানীয় কোনো মানুষের ছবি তুলবেন না
- নিরিবিলি পরিবেশ চাইলে ছুটির দিনে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন
- বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
ইতি কথা
মূলত সাজেক ভ্যালি এর নাম শুনলেই ভ্রমণপিয়াসীদের মনে হয় এ-যেনো কোনো এক স্বর্গরাজ্যের নাম! যার ফলে এই স্বর্গরাজ্য সরাসরি উপভোগ করতে… ভ্রমণে অনাগ্রহ প্রকাশ করা মানুষটিও পৌঁছে যায় এই স্বপ্নের রাজ্যে! আপনিও যদি সাজেকের এই সৌন্দর্য মিস করতে না চান তবে সময় করে দ্রুত বেড়িয়ে আসুন নিজের মতো করে!