" " "
"
দর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডমৌলভীবাজারসিলেট বিভাগ

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান সমূহ । কিভাবে যাবেন,কোথায় থাকবেন, ভ্রমণকালীন খাওয়া দাওয়া সহ বিস্তারিত ট্যুরিস্ট গাইড!

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান : ভ্রমণ মানুষের অশান্ত মনকে শান্ত করে তুলে। জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে করতে হাঁপিয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত আমাদের ভ্রমণের সুবিধাকে কাজে লাগাতে হয়। কাজের চাপে কিংবা পরিস্থিতির কারণে হয়তে সবসময় লম্বা ভ্রমণে নিজেকে হারানোর সুযোগ পাওয়া যায় না।

তবে মাঝেমধ্যে কিছুটা নিয়মের বাইরে গিয়ে দূরে কোথাও লম্বা ছুটি কাটাতে পারলে মন্দ হয় না। ছোট কিংবা বড়, একদিনের জন্য কিংবা অনেকদিনের জন্য যেকোনো টাইপের ভ্রমণের ক্ষেত্রে শ্রীমঙ্গল হতে পারে আদর্শ অপশন। কেনো বলছি? জানতে সাথেই থাকুন। 

" " "
"

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ

শ্রীমঙ্গল পরিচিতি

যে স্থানটিকে আপনি ভ্রমণের জন্য সেরা বলে মনে করেছেন কিংবা বেছে নিয়েছেন সে স্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে না জেনে থাকাটা বড্ড বোকামি হবে। সুতরাং নিজের নাম বোকাদের খাতায় লেখাতে না চাইলে এক্ষুনি জেনে নিন শ্রীমঙ্গল নামক উপজেলাটির পরিচিতি সম্পর্কে। 

শ্রীমঙ্গল মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি উপজেলা এবং এই বিভাগটি মূলত সিলেট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি উপজেলা হিসেবে বর্তমানে নিজ দর্শনীয় স্থানগুলির খাতিরে সারা এশিয়ায় বেশ পরিচিত। ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান করা এই শ্রীমঙ্গল সারা বাংলাদেশে চায়ের রাজধানী, শীতের শহর, বৃষ্টিপাতের অঞ্চল, পর্যটন শহর নামেই বেশ পরিচিত। হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে সূর্য উদয়ের দৃশ্য, চা বাগান, সাত রং এর চা এবং গ্র‍্যান্ড সুলতান পাঁচতারকা রিসোর্ট এর পানির ফুয়ারা…কি নেই এই অঞ্চলটিতে! 

মূলত হাইল-হাওরের পিঠে ৯ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই শ্রীমঙ্গল উপজেলা। অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এখানকার চা বাগানকে ঘিরে। 

শ্রীমঙ্গলের ইতিহাস

ইতিহাস আমাদের নিজেদের শেকড় খুঁজে পেতে সাহায্য করে। আমাদের দেশেই যে ইতিহাস সমৃদ্ধ বিভিন্ন অঞ্চল বিশ্ব ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে সে-সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই খুব একটা জানার প্রয়োজনও মনে করি না। তবে আমাদের জানা উচিত। ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা উচিত। এই পর্যায়ে আমরা শ্রীমঙ্গলের ইতিহাস সম্পর্কে জানবো। 

বলা হয়ে থাকে অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছিলো প্রায় ২০০ বছর আগে। যা সাধারণত ‘শ্রীদাস’ ও ‘মঙ্গলদাস’ নামে দু’জন ব্যাক্তির নাম থেকেই নেওয়া হয়েছে। এই দুই ব্যাক্তি অঞ্চলটির হাইল-হাওরের তীরে বসতি স্থাপন করার পর থেকে ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে উঠে শ্রীমঙ্গল নামক অঞ্চলটিতে। 

এছাড়াও আরো একটি সম্ভাব্য ইতিহাস রয়েছে এই শ্রীমঙ্গল উপজেলার। ধারণা করা হয় শ্রীমঙ্গল শহরের কিছুটা দূরে ‘মঙ্গলচন্ডী’ দেবতার একটি স্থলী থাকায় তার নামেই পরবর্তীতে স্থানটির নামকরণ করা হয় শ্রীমঙ্গল। সুতরাং সব তথ্য এবং সম্ভাব্য ইতিহাসের ভিত্তিতে বলা যায় শ্রীমঙ্গল অঞ্চলটি প্রায় ২০০+ বছরেরও বেশ পুরোনো একটি স্থান। 

শ্রীমঙ্গলের অবস্থানSreemangal Location

অবস্থানগত দিক দিয়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি অঞ্চল এই শ্রীমঙ্গল। রাজধানী থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২শ’ কি.মি. এর মতো। আরেকটু ভেঙে বললে, সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই উপজেলা! 

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান – Srimangal Tourist Spot

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান সমূহ 

এবার আসি শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান সমূহের ব্যাপারে। উপজেলাটিতে ঘুরবার মতো অনেক স্থান রয়েছে। যা যেকোনো বয়সের পর্যটকের কাছে সেরা ট্যূ্র স্পট হিসেবেই বিবেচিত হবো। চলুন তবে এই পর্যায়ে স্থানটির বেশকিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

শ্রীমঙ্গলের প্রধান আকর্ষণ হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। যার পূর্বে পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ বন্যপ্রাণী ও গাছপালা নিয়ে সাজানো এই উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হলো বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক। এছাড়াও এই উদ্যানটি আপনাকে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ছয় প্রজাতির সরিসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং চার প্রজাতির উভচর সরাসরি উপভোগ করার সুযোগ দিবে৷ ৩ ঘন্টা, ১ ঘন্টা কিংবা দেড় ঘন্টার পথ ব্যবহার করে যেকেউ এই উদ্যানটি উপভোগ করতে পারবে। 

চা গবেষণা ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসছে এই চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। যারা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পছন্দ করেন এবং যাদের ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি বাড়তি ঝোঁক রয়েছে তারা ভারতের আসামের পরেই উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরাতন এই চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উপভোগ করতে পারেন। শ্রীমঙ্গলের মূল শহর থেকে মাত্র ২ কিলো দূরে গেলেই এই স্থানটিতে পৌঁছে যেতে পারবেন আপনিও!

শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘর

চায়েরও যে জাদুঘর আছে সে সম্পর্কে কি আপনি পূর্বে জানতেন? না জানলে এক্ষুণি ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘরে৷ মূলত বাংলাদেশের দেড় শ বছরের পুরনো চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছে এই চা জাদুঘর। পাথরের প্লেট, প্রনিং নাইফ, ইলেকট্রিক ফ্যান, দিকনির্ণয় যন্ত্র, ফসিল, লোহার পাপস, ঘটি, ব্রিটিশ আমলের পাখা, ফর্ক, সার্ভে চেইনসহ চা বানানো কিংবা চা পাতার বাগানে ব্যবহৃত অসংখ্য ঐতিহাসিক জিনিসপত্রের দেখা মিলবে এই জাদুঘরে। 

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন মূলত ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা একটি ফাউন্ডেশন। এখানে চিরিয়াখানা বিপন্ন, বিপদগ্রস্ত আহত বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় যত্নের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। মূলত যেসব প্রানীদের যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে সে-সব প্রানীদের প্রতিষ্ঠানটিতে রেখে দেওয়া হয়। মূলত পরবর্তীতে এসব প্রাণীদের দেখতেই দেশ বিদেশের পর্যটক ও দর্শকরা এখানে ভিড় করতে শুরু করে। 

নীলকণ্ঠ টি কেবিন

সাত রং চা পরিবেশন করার মূল স্থান হলো এটি। যারা এতোদিন সাতরঙা চায়ের নাম শুনে এসেছেন তবে কখনো টেষ্ট করে দেখেননি তারা এই দোকানটি ঘুরে যেতে পারেন। ৫ রঙের চা ছাড়াও, ১ থেকে ৭ রঙের চা সাশ্রয়ী মূল্যে পেতে নীলকণ্ঠ টি কেবিনের জুড়ি মেলা ভার৷ 

শ্রীমঙ্গল রিসোর্ট – Sreemangal Resort

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণকালীন সময়ে কোথায় থাকবেন?

ঘুরতে গিয়ে যারা ক’দিন থেকে আসার প্ল্যান করছেন আর্টিকেলের এই অংশটি তাদের জন্য। শ্রীমঙ্গল ভ্রমণকালীন সময়ে কোথায় থাকবেন কিংবা কোথায় রাতটা কাটাবেন সে-সম্পর্কে এই পর্যায়ে আলোচনা করবো৷ 

পর্যটন এলাকা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে অসংখ্য রিসোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে। যাদের হাই বাজেট রয়েছে তারা পাঁচ তারকা গ্র্যান্ড সুলতানে উঠতে পারেন। এছাড়াও মিডিয়াম কিংবা স্বল্প বাজেটেরও অসংখ্য হোটেল রয়েছে। তবে বর্তমানে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গলের নভেম ইকো রিসোর্ট।

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণকালীন সময়ে খাওয়া-দাওয়া কোথায় করবেন?

বাঙালি ভোজনরসিক। খাবার-দাবারের ব্যাপারে যেহেতু আমরা বাঙালিরা সবসময় সিরিয়াস থাকি সেহেতু ভ্রমণের ক্ষেত্রেও নতুন স্থানের নতুন কিংবা জনপ্রিয় খাবারের প্রতি আমাদের প্রচন্ড আগ্রহ কাজ করে। শ্রীমঙ্গলের জনপ্রিয় খাবারগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ৫, ৮, ১০ রঙা চা। যা পেতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে নীলকণ্ঠ টি কেবিনে।

এছাড়াও দুপুরের কিংবা রাতের খাবারের তাগিদে খুবই জনপ্রিয় খাবার পরিবেশনকারী রেস্তোরা কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁয় চলে যেতে পারেন। পাশাপাশি পানসি, সাতকড়া, শ্বশুরবাড়ি, গ্র্যান্ড তাজ রেস্টুরেন্টগুলিও যথেষ্ট ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। 

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের বাড়তি টিপস

এবার শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের বাড়তি টিপস সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পালা। এতে করে আপনার ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো স্বস্তিদায়ক এবং অর্থবহ। 

  • চা-বাগানে বেড়াতে গেলে অযথা চা পাতা ছেঁড়া থেকে বিরত থাকুন
  • যাতায়াতের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
  • পাহাড়ি অঞ্চলে শিশুদের নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন
  • দূর্গম অঞ্চলে বয়স্ক কিংবা রোগীদের ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন
  • ঘোরাঘুরির সময় চারপাশে চোখ রাখুন

ইতি কথা

শ্রীমঙ্গল উপজেলা এবং অঞ্চলটির দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে এই ছিলো আমাদের বিস্তারিত আলোচনা! কেমন লেগেছে জানাতে দেরি করবেন না কিন্তু! আর হ্যাঁ! শ্রীমঙ্গলের কোন পর্যটন স্পটে আপনি ইতিমধ্যেই ভ্রমণ করেছেন কিংবা করতে চান সে-সম্পর্কেও জানাতে ভুলবেন না!

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *