" " "
"
চট্টগ্রাম বিভাগদর্শনীয় স্থানবাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডরাঙ্গামাটি

রাঙামাটি ভ্রমণ গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন!

রাঙামাটি ভ্রমণ : সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বেশ সমৃদ্ধ আমাদের এই বাংলা। দেশের প্রতিটি জেলা কিংবা স্থানগুলির সৌন্দর্য বেশ আগ্রহের সাথে উপভোগ করে দর্শনার্থীরা। তেমনই একটি দর্শনীয় জেলা কিংবা স্থান হলো রাঙামাটি। এখানে কখনো হয়তো সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে বেয়ে আসা ঝর্ণা থেকে অবিরাম পানি পড়ছে, আবার কখনো বা পাহাড়ের উপর ছাউনি দেওয়া পরিষ্কার আকাশে উড়ছে সাদা মেঘের ভেলা।

রাঙামাটিতে দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। যা উপভোগ করতে অনেকেই সারা বছরই রাঙামাটি ভ্রমণে বের হোন! চলুন তবে আজ জেনে নেওয়া যাক রাঙামাটি ভ্রমণে কি কি উপভোগ করবেন সে-সম্পর্কে! 

" " "
"

রাঙামাটি ট্যুরিস্ট গাইড – Rangamati Tourist Spot

Rangamati Map Location

সাজেক – রাঙামাটি ভ্রমণ 

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের আশীর্বাদ হলো এই সাজেক। চাঁদের গাড়িতে চড়ে এই সারা সাজেক ঘুরে-বেড়ানোর যে অনুভুতি তা হয়তো দেশের অন্য কোনো দর্শনীয় স্থানে ঘুরেফিরেও পাওয়া যাবে না। 

সাজেক হলো রাঙামাটির সেই দর্শনীয় স্থান, যেখান থেকে দাঁড়িয়ে আকাশের মেঘ ছোঁয়া যায়। সারা বছর উপরের আকাশে মেঘ দেখে দেখে আফসোস করা ব্যাক্তিরা চাইলে এই সাজেকের সাহায্যে মেঘ উপভোগ করতে পারে। 

এছাড়াও সাজেকে রয়েছে সবুজের সমারোহ। সারা পথ জুড়ে অন্যরকম প্রশান্তি এবং পথের দু-পাশে সবুজ পাহাড়! এখানকার উপজাতিরাও বৈচিত্র্যতায় ভরা। ফলে এসব মানুষের সংস্পর্শে এসেও জানা যাবে অনেককিছু, শেখা যাবে অন্যান্য জাতি সম্পর্কে! 

পলওয়েল পার্ক – রাঙামাটি ভ্রমণ  

কাপ্তাই লেকের কোল ঘেঁষে তৈরি হওয়া পলওয়েল পার্ক রাঙামাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরো একটি অনন্য উদাহরণ। যা রাঙামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিলো এবং তাদের তত্বাবধানেই বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে। 

অন্যসব পার্কের মতো এই পার্কে রয়েছে মেরি গো রাউন্ড, হানি সুইং, মিনি ট্রেন, প্যাডেল বোটের মতো মজার মজার রাইডিং এবং গেইমস উপভোগ করার সুবিধা। এছাড়াও পিকনিকসহ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিও প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে উপভোগ করার ক্ষেত্রে এই পার্ক হতে পারে সেরা চয়েজ। 

বর্তমানে রাঙামাটির পলওয়েল পার্কে জনপ্রতি প্রবেশ ফি এর ক্ষেত্রে ৩০ টাকা ফি নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও সেখানকার কটেজও ভাড়া নিতে পারেন চাইলে। এখানে কটেজ ভাড়া নেওয়ার বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন সকালে ফ্রি নাস্তা, ফ্রি সুইমিংপুল ব্যবহারের সুযোগ, কোনো ফি ছাড়া এন্ট্রি, ফ্রিতেই কার পার্কিং, ফ্রি ওয়াইফাই এবং টানা ২৪ ঘণ্টা কঠোর নিরাপত্তা সুবিধা ভোগ করা৷ 

বর্তমানে এই পলওয়েল পার্ক নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতার ছোঁয়ায় এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, কোনো ভ্রমণপিয়াসী একটিবারের জন্যেও যদি রাঙামাটি ভ্রমণ উপভোগে যায় তবে সে কোনোভাবেই এই পার্ক ঘুরে আসার চান্স মিস করে না। আপনিও যদি রাঙামাটি ভ্রমণের প্ল্যান করে থাকেন তবে অবশ্যই এই পলওয়েল পার্ক উপভোগের চান্স একদমই মিস করবেন না৷ 

কাপ্তাই লেক – রাঙামাটি ভ্রমণ 

রাঙামাটি ভ্রমণে গিয়েছেন কিংবা ভ্রমণের ইচ্ছা আছে, কিন্তু কাপ্তাই লেকের নাম শুনেননি, এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

সবুজ ও শ্যামল পাহাড়, ঝর্ণা, এবং জলের এক পার্ফেক্ট কম্বিনেশন এই কাপ্তাই লেক। যার ফলে ভ্রমণপিপাসু এবং প্রকৃতি প্রেমীরা সময় পেলেই রাঙামাটি ভ্রমণ এর পাশাপাশি এই কাপ্তাই লেক উপভোগ করতেও ভুল করে না। 

১১,০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মতো লম্বা এই কাপ্তাই লেক রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। অসম্ভব বড় একটি লেক হওয়ায় সম্প্রতি এই লেককে এশিয়ার সবচাইতে বড় লেক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। 

কেবল পানিই নয়! লেকের পাশাপাশি এই স্থানটির ছোট ছোট পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে৷ সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো লেকের সৌন্দর্য ছাড়াও এই পাহাড়গুলিতে থাকা সবুজে ঘেরা গাছের সমারোহ নিয়েও অনেকেই বেশ আগ্রহী থাকেন। গাছ সম্পর্কে জানেন কিংবা জানার চেষ্টা করেন। 

লেকের চারপাশটা যেহেতু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা, সেহেতু এর কোনো অংশই উপভোগের বাইরে নয়। এক্ষেত্রে আপনি চাইলেই নৌকা বা বোটে করে লেকের জলে ভেসে ভেসে এই লেকের আশেপাশের সৌন্দর্য মনভরে উপভোগ করতে পারেন৷ 

কাপ্তাই লেকের পানিতে অনেকেই দলবেঁধে নৌ বিহার করতেও পছন্দ করে। আপনার যদি ভালো টিম থাকে তবে আপনিও নৌ বিহারের সাহায্য নিয়ে কাপ্তাই সৌন্দর্য দেখে নিতে পারেন৷ এছাড়াও লেকটির কতৃপক্ষ দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্পিডবোট (speedboat) কিংবা রিজার্ভ নৌকারও ব্যবস্থা করেছে। 

ফুরমোন পাহাড় – রাঙামাটি ভ্রমণ 

বলুন তো পাহাড় ভালোবাসেন কে কে? পাহাড়প্রেমীদের জন্য রয়েছে আজকের আর্টিকেলের এই অংশটি। এখানে আমরা আলোচনা করবো ফুরমোন পাহাড় সম্পর্কে। 

এই পাহাড়ের অবস্থান হলো রাঙামাটি শহরের কিছুটা দূরে৷ অপার্থিব সৌন্দর্যের এ পাহাড়ের এমন নামকরণের পেছনেও একটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। পাহাড়টি ঘুরতে গিয়ে সকলের মন ফুরফুরে হয়ে যাওয়ায় পাহাড়টির নামকরণ করা হয়েছে ফুরমোন পাহাড়! বেশ মজার না? 

রাঙামাটি ভ্রমণ করতে গিয়ে যারা ফুরমোন পাহাড় ঘুরে আসতে চান তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ২,৬০০ ফিট উঁচুতে প্রায় ৪০০ ধাপ খাড়া সিঁড়ির চমক। এডভেঞ্চার-প্রেমীদের কাছে এসব সিঁড়ি যেনো সোনার খনি!

ফুরমোন পাহাড়ের পাদদেশে উঠতে পারলে কাপ্তাই লেকের পুরো সৌন্দর্য এক স্থান থেকেই উপভোগ করার সুযোগ মেলে। এক্কেবারে সোজা কথায় এই ফুরমোনের মাথা থেকে পাখির চোখে দেখা যায় লেকের সমস্ত সৌন্দর্য। যারা কাপ্তাই লেকে ঘুরতে যাবেন তারা সময় করে এই ফুরমোন পাহাড়েও ঘুরে আসতে পারেন। এতে করে পুরোপুরি সৌন্দর্যটা উপভোগ করা সহজ হবে। 

এই পাহাড়ের গভীর বন থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝি পোকার ডাক, প্রজাপতির স্বাধীন ছুটে চলা, বুনোপোকাদের ব্যস্ততা আপনাকে মুগ্ধ করতে খুব একটা সময় নিবে না। বলে রাখা ভালো পাহাড়ের উঁচুতে রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। সুতরাং বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই ফুরমোন ভ্রমণ হতে পারে প্লাস পয়েন্ট! 

তবে আর দেরি কেনো! মন ফুরফুরে করে তুলতে আজই ফুরমোন পাহাড় ভ্রমণের প্ল্যানিং করে ফেলুন৷ 

ঝুলন্ত সেতু – রাঙামাটি ভ্রমণ 

রাঙামাটি ভ্রমণে গেলে যে স্থানটি উপভোগ না করে চলে আসাটাকে বোকামি মনে করা হয় সে স্থানটির নাম হলো ঝুলন্ত ব্রিজ বা ঝুলন্ত সেতু। মূলত রাঙ্গামাটি শহরের শেষপ্রান্তে কর্ণফুলী লেকের উপর নির্মাণ করা হয়েছিলো এই সেতু। 

উপরের আকাশ এবং চারপাশের উঁচু-নীচু পাহাড়ের সারি উপভোগের ক্ষেত্রে এই ঝুলন্ত সেতুটি হতে পারে সেরা একটি মাধ্যম। সেতুটির ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিচে লেক, উপরে আকাশ এবং চারপাশে সবুজের সমারোহের মাঝে নিজেকে ফোকাস করা একটা ছবিই আপনার প্রাণহীন অ্যালবামকে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে যথেষ্ট। 

পরিমাপের দিক দিয়ে যদি বলে এই সেতুটি মূলত ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ লম্বা একটি সেতু। আর যদি সেতুটির কোনো স্পেসিফিক নাম সম্পর্কে জানতে চান তবে বলতে পারি এই সেতুটির অফিসিয়াল নাম হলো সিম্বল অব রাঙ্গামাটি। 

রাঙামাটি ভ্রমণ করতে গিয়ে অডিটোরিয়াম, পার্ক, পিকনিক স্পট, স্পীড বোট ও দেশীয় নৌ-যানের পাশাপাশি এই ঝুলন্ত সেতু আপনার আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। একইসাথে চারপাশের দৃশ্য আর মনোরম পরিবেশ আপনার ক্লান্ত মনকে শ্রান্ত করে দিবে। 

আশা করি আপনার পরবর্তী রাঙামাটি ভ্রমণ প্ল্যানিং এর অংশ হিসেবে এই ঝুলন্ত সেতু ভ্রমণের ব্যাপারটিও থাকবে। কেননা এতো সুন্দর ভিউ পেতে এই ঝুলন্ত সেতুর ভুমিকা কোনোভাবেই ফেলে দেওয়া যায় না। একটু আরাম করে, নিজ চোখে, এক স্থান থেকে পুরো লেক এবং চারপাশে সৌন্দর্য উপভোগ আমন্ত্রণ রইলো। মিস করবেন না কিন্তু! 

ইতি কথা

আশা করি আপনার রাঙামাটি ভ্রমণ হয়ে উঠবে জীবনের সেরা একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে প্রকৃতিকে উপভোগ করার এই অভিজ্ঞতা আপনাকে মানসিকভাবে করে তুলবে আরো স্ট্রং এবং ফ্রেশ।

" " "
"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *