নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী | টিকিটমূল্য | স্টপেজ | সুবিধাসমূহ
ট্রেন জার্নির প্রেমে পড়ে মানসম্মত ট্রেন খুঁজে পাওয়া নিয়ে বিরাট সমস্যায় আছেন কে কে? যারা এমন সমস্যায় আছেন এবং এর পাশাপাশি যারা বিভিন্ন ট্রেনে করে যাতায়াত করতে পছন্দ করেন কিংবা দরকার পড়ে তাদের জন্যেই মূলত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি। আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয় হলো নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী! ট্রেনটির নামে একটা সাগর সাগর ভাব থাকলে সবদিক দিয়ে মোটামুটি বাজেট অনুযায়ী ভালো ট্রেনই বলা চলে। কেনো? জানতে হলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের সাথেই থাকুন।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী – Nilsagor Express Train Schedule
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচিতি
মূলত এই নীলসাগর এক্সপ্রেস নামক ট্রেনটি তাদের জন্যে সার্ভিস দিয়ে আসছে যাদের নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত ঢাকা থেকে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি থেকে ঢাকায় যাতায়াত করবার প্রয়োজন পড়ে। ট্রেনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিষেবার একটি সরকারি ট্রেন হিসেবে কাজ করে আসছে। যার সার্ভিস শুধুমাত্র আন্তঃনগরের মাঝেই সীমাবদ্ধ!
এই ট্রেনটি দিনে সর্বমোট ০৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় যাতায়াতের পেছনে খরচ করে। এক্ষেত্রে গাড়িসম্ভার হিসেবে কাজ করি সর্বমোট ১২ টি মানসম্মত এবং উন্নত গাড়ি। সবচেয়ে সুবিধার ব্যাপার হলো নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন দৈনিক হারে সার্ভিস দিয়ে। এটি মূলত বাংলাদেশের ৭৬৫ / ৭৬৬ নাম্বার ট্রেন৷
গতির ব্যাপারে যদি বলি তবে বলবো, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন প্রতি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিয়ে থাকে। ট্রেনটিতে এসি, নন-এসি, শোভন শ্রেণীর আসন রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে আসন বিন্যাস, ঘুমানোর জন্যে সুব্যবস্থা এবং খাদ্য সুবিধা লাভের সুযোগ।
আমাদের এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশে বর্তমানে যে ক’টি দ্রুত ও বিলাসবহুল ট্রেন রয়েছে, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন তার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠা অন্যতম একটি ট্রেন৷ বর্তমানে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে এই ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে এবং এই যাত্রা শেষ হয় একেবারে চিলাহাটি রেলস্টেশনে গিয়ে।
সুতরাং যারা এই পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ব্যবহার করতে পারেন। আর এক্ষেত্রে যদি নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচির দরকার পড়ে তবে আমাদের সাথেই থাকুন।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ইতিহাস
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী নিয়ে সাজানো আর্টিকেলের এই অংশে এবারে আমরা আলোচনা করবো নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ছোটখাটো ইতিহাস সম্পর্কে।
এই ট্রেনটি সর্বপ্রথম কাজ শুরু করে ১ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে। হিসেব করলে দেখা যায় প্রায় ১৪ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিলো বর্তমান সময়ে জন্যপ্রিয় এই ট্রেন নীলসাগর এক্সপ্রেস।
শুরুতে রুট হিসেবে ট্রেনটি কেবলমাত্র ঢাকা থেকে নীলফামারী রুটেই চলাচল করেছিলো। পরবর্তীতে উত্তরাঞ্চলের মানুষ মানব-বন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের জের ধরে ট্রেনটির রুট চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
পরবর্তী সময় ট্রেনটির রুটকে বর্ধিত করার ক্ষেত্রে খরচ করা হয় প্রায় ২২৬ কোটি টাকার মতো। সব জল্পনা-কল্পনা শেষে ট্রেনটি ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারিতে একটি উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনকে গন্তব্য স্থল হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে।
এবারে ট্রেনটির রোলিং স্টকের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা যাক। শুরুতে ট্রেনটি পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সাদা ব্রডগেজ রেক। যা সে-সময় সরাসরি ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছিলো।
পরবর্তীতে এই রেক পরিবর্তন করে ডিজিটাল কিংবা আধুনিক রেক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালে আবারো ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয় আধুনিক রোলিং স্টক এবং এসব স্টক ব্যবহার করা শুরু হয়।
সবশেষে এই আধুনিক রোলিং স্টককে আবারো পরিবর্তিত করা হয়। এক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া হয় বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের। বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের নতুন পিটি ইনকা রেক বা রোলিং স্টকের ব্যবহার শুরু হয় নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের রোলিং স্টকে। এক্ষেত্রে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের পুরোনো আধুনিক রোলিং স্টক এক্সচেঞ্জ করা হয় বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন রোলিং স্টকের সাথে।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের বন্ধের দিন
মূলত নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিনই সার্ভিস দিয়ে থাকে। তবে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্যক্রম শুধুমাত্র যখন ঢাকা টু নীলফামারী চলাচল করে তখন প্রতি সপ্তাহের সোমবার এবং যখন চিলাহাটি টু ঢাকা চলাচল করে সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহের রবিবার বন্ধ থাকে।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি এবং স্টপেজ
যারা ইতিমধ্যেই আর্টিকের পড়াকালীন সময়ে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে জানার জন্যে অপেক্ষা করেছেন তারা নিচের পয়েন্টগুলিতে ফোকাস করতে পারেন। এখানে প্রতিটি স্টপেজ এবং এর সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সাজানো আছে।
- বিমান বন্দর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ০৭ঃ০৭ এবং চিলাহাটি থেকে ০৪ঃ৫৩
- জয়দেবপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ০৭ঃ৩৩ এবং চিলাহাটি থেকে ০৪ঃ২৭
- পার্বতীপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৪ঃ১৫ এবং চিলাহাটি থেকে ২১ঃ৪০
- সৈয়দপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৪ঃ৪২ এবং চিলাহাটি থেকে ২১ঃ০৩
- নীলফামারী রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৫ঃ০৫ এবং চিলাহাটি থেকে ২০ঃ৩৯
- ডোমার রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৫ঃ২৪ এবং চিলাহাটি থেকে ২০ঃ২১
- বঙ্গবন্ধু সেতু রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ০৯ঃ০০ এবং চিলাহাটি থেকে ০৩ঃ১০
- মুলাডুলি রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১০ঃ৩৯ এবং চিলাহাটি থেকে ০১ঃ৪৫
- নাটোর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১১ঃ১৬ এবং চিলাহাটি থেকে ০০ঃ৩৩
- আহসানগঞ্জ রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১১ঃ৪০ এবং চিলাহাটি থেকে ২৩ঃ৪৫
- সান্তাহার রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১২ঃ১৫ এবং চিলাহাটি থেকে ২৩ঃ৩০
- আক্কেলপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১২ঃ৪০ এবং চিলাহাটি থেকে ২৩ঃ০১
- জয়পুরহাট রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৩ঃ০৪ এবং চিলাহাটি থেকে ২২ঃ৪৫
- বিরামপুর রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৩ঃ৩৬ এবং চিলাহাটি থেকে ২২ঃ১৪
- ফুলবাড়ি রেলস্টেশন ঢাকা থেকে ১৫ঃ৫০ এবং চিলাহাটি থেকে ২২ঃ০০
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট
আগেই বলেছি নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ব্যয়বহুল এবং বেশ আধুনিক একটি ট্রেন। তার মানে এই নয় যে সাধারণ কোনো যাত্রী এই ট্রেনটির কোনো সিট কিনে তা ব্যবহার করতে পারবে না। এসি সিটের পাশাপাশি ট্রেনটিতে কিন্তু নন-এসির সিটও রয়েছে। সাধারণ সিটের পাশাপাশি রয়েছে হাই প্রাইজের সিট। চলুন তবে এবারে জেনে নেওয়া যাক নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের সঠিক মূল্য সম্পর্কে।
- নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন সিটের দাম ৩৬০ টাকা
- যারা ট্রেনটির শোভন চেয়ারের সিটটি ব্যবহার করতে চান তাদের গুনতে হবে ৪৩৫ টাকা
- প্রথম সিট এর ক্ষেত্রে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন কতৃপক্ষ চার্জ করে থাকে ৫৭৫ টাকা
- প্রথম বার্থ সিট যারা কিনবেন তাদের পে করতে হবে ৮৬৫ টাকা
- স্নিগ্ধা সিটের দাম ৭২০ টাকা
- সবশেষে এসি বার্থ সিটের জন্যে আপনাকে পে করতে হবে ১২৯৫ টাকার মতো
ইতি কথা
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচিতি, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ইতিহাস, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকেশন এবং নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে এই ছিলো আমাদের আলোচনা! আশা করি এই ট্রেন সম্পর্কিত সকল তথ্য একসাথে সাজানোর কারণে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। তবুও যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর জানবার থাকে তবে তা আমাদের অফিসিয়াল মেইলবক্সে কিংবা এই পোস্টের কমেন্টবক্সে করতে পারেন! ধন্যবাদ সবাইকে। আপনার পরবর্তী ট্রেন জার্নির প্রতি শুভ কামনা জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।