ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী | টিকিটমূল্য | স্টপেজ | সুবিধাসমূহ
ট্রেন জার্নি কার না ভালো লাগে! আর সেটি যদি হয় প্রয়োজনের তাগিদে তবে তো কোনো কথাই নেই। অর্থ্যাৎ ধরুন আপনার ঢাকা টু চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম টু ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। সে মুহুর্তে আপনি এই ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনে যাতায়াত করতে পারেন।
যারা আজ ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান তারা তাদের জন্যই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। আজ আমরা আলোচনা করবো ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের পরিচিতি, সময়সূচি, টিকিটমূল্য এবং বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে। সুতরাং কোনো তথ্য মিস করতে না চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী – Dhaka to Chittagong Train Schedule
ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের পরিচিতি
শুরুতে আমরা ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের পরিচিতি সম্পর্কে জানবো। এই ট্রেন মূলত বাংলাদেশ সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো এটি একটি আন্তঃনগর ট্রেন।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের পরিচিতি সম্পর্কে যদি বলি তবে আমাকে বেশকিছু ট্রেনের পরিচিতি তুলে ধরতে হবে। কেননা এই রুটে কেবলমাত্র একটি নয়! বরং বেশ কয়েকটি ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। এই ট্রেনগুলি হলো:
- সূবর্ণ এক্সপ্রেস
- মহানগর এক্সপ্রেস
- মহানগর প্রভাতী
- তূর্ণা এক্সপ্রেস
- সোনার বাংলা এক্সপ্রেস
- চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন
- কর্ণফুলি এক্সপ্রেস
- চট্টলা এক্সপ্রেস
সূবর্ণ এক্সপ্রেস
বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষের মালিকানাধীন একটি জনপ্রিয় ট্রেন হলো এই সূবর্ণ এক্সপ্রেস। ট্রেনটির জনপ্রিয়তার অনেকগুলির কারণে মাঝে অন্যতম একটি কারণ হলো এর বিরতিহীন সার্ভিস। বলে রাখা ভালো, এটি বাংলাদেশের প্রথম বিরতিহীন একটি ট্রেন।
সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন শুধুমাত্র আন্তঃনগরের মাঝেই যাত্রী আনা-নেওয়া করে থাকে। ট্রেনটি মূলত ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে থাকে। সর্বমোট ৩৪৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় এই সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন।
মহানগর এক্সপ্রেস
অনেকেই মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন এবং মহানগর প্রভাতী ট্রেনকে একি ট্রেন মনে করে থাকেন। যা একেবারেই ভুল ধারণা। দুটো ট্রেনের নাম কিছুটা একই মনে হলেও দু’টোই কিন্তু আলাদা ট্রেন৷ মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন হলো বাংলাদেশের ৭২১-৭২২ নাম্বার ট্রেন। এটিও কিন্তু সরকারি একটি ট্রেন। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখে উদ্ভোধন করা হয়েছিলো। ট্রেনটি মূলত চলাচলের সীমা হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ঢাকা রুট পর্যন্ত পথকে নির্বাচিত করেছে। নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ও টিকেট, ভাড়া ২০২২
মহানগর প্রভাতী
এবার আসি মহানগর প্রভাতী নামক ট্রেনটির ব্যপারে। এটি হলো বাংলাদেশের ৭০৩-৭০৪ নাম্বার ট্রেন৷ ট্রেনটি একটি আন্তঃনগর ট্রেন হলেও দূরপাল্লার ট্রেন হিসেবে এর জনপ্রিয়তা প্রায় চোখে পড়ার মতো।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে এই মহানগর প্রভাতী নাম ট্রেনটি। যারা কুমিল্লা, ফেনী, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত করতে চান তারা এই ট্রেনটির সার্ভিস নিতে পারেন।
তূর্ণা এক্সপ্রেস
এটি বাংলাদেশের ৭৪১-৭৪২ নাম্বার ট্রেন৷ যা সপ্তাহের প্রতিদিনই সার্ভিস দিয়ে থাকে। যারা ঢাকা টু চট্টগ্রাম রুটে বিলাসবহুল ট্রেনে যাতায়াত করতে চান তাদের জন্যে তূর্ণা এক্সপ্রেস হতে পারে পারফেক্ট চয়েজ।
কেননা সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে এটিকে এশিয়ার অন্যতম বিলাসবহুল ট্রেন বললেও ভুল কিছু বলা হবে না। এছাড়াও ট্রেনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এটি রাতেরবেলায় যাত্রী পরিবহন করে থাকে। যা অন্যান্য ট্রেনের বেলায় দেখা যায় না।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস
৭৮৭-৭৮৮ নং ট্রেনকে বলা হয় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন। এটিও একটি বিরতিহীন এবং জনপ্রিয় ট্রেন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে থাকে৷
খুব একটা পুরনো ট্রেন না হলেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেনটি। বিরতিহীন ট্রেন হলেও কেবল যাত্রী উঠা-নামার সুবিধার্থে ট্রেনটি কেবল ঢাকা বিমানবন্দরে ২ থেকে ৫ মিনিট সময়ের জন্যে থামে।
চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন
চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন হলো বাংলাদেশের ১/২ নং ট্রেইন। যা বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষ পরিচালনা করে আসছে। যারা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের যেকোনো স্টপেজে নামতে চান তারা এই চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনটি ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত প্রায় ৮ ঘন্টা ৫০ মিনিটের পথ অতিক্রম করে থাকে এই চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন৷
কর্ণফুলি এক্সপ্রেস
নিয়মিত ৮ ঘন্টা ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দেওয়া এই কর্ণফুলি এক্সপ্রেস বাংলাদেশের রেলওয়ে কতৃপক্ষের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ট্রেন। এতে বিনোদনের সুবিধাসহ মালপত্র রাখার সুব্যবস্থা রয়েছে।
যারা চট্টগ্রাম টু ঢাকা রোডের ফেনী জেলা, কুমিল্লা জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, কিশোরগঞ্জ জেলা, নরসিংদী জেলা ও গাজীপুরের যেকোনো স্থানে নামতে চান তাদের জন্যে এই কর্ণফুলি এক্সপ্রেস ট্রেন হতে পারে পারফেক্ট চয়েজ।
চট্টলা এক্সপ্রেস
চট্টলা এক্সপ্রেস হলো বাংলাদেশের ৮০১/৮০২ নাম্বার ট্রেন। খ শ্রেণী আন্তঃনগর ট্রেন হিসেবে এই ট্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস দিয়ে আসছে৷ প্রায় ১১ বছরের যাত্রায় ট্রেনটি কম জনপ্রিয়তা কুড়ায়নি! ট্রেনটি যাত্রাপথে সর্বমোট ১৪ টি স্থানে স্টপেজের মুখোমুখি হয়।
ঘুমানোর ব্যবস্থা না থাকলেও অন বোর্ডে খাবার গ্রহণের সুবিধা আছে ট্রেনটিতে। ট্রেনটির চলাচলের রুটের সাথে ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলাকে যুক্ত করার কারণে বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে পারছে এর যাত্রীরা।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচি
ঢাকা টু চট্টগ্রাম যাত্রাপথে বিভিন্ন ট্রেন চলাচল করতে পারে। একজন গ্রাহক হিসেবে টিকিট, সময় এবং সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যাটে-বলে মিলে গেলে আপনিও যেকোনো ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে চলুন জেনে নেওয়া যাকঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে।
সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন: এটি ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে ৪.৩০ মিনিটে এবং তা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় পরেরদিন সকাল ৯.৫০ মিনিটে।
মহানগর এক্সপ্রেস: এই ট্রেন ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৭.০০ মিনিটে এবং তা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় দুপুর ১২.৪৫ মিনিটে।
মহানগর প্রভাতী: মহানগর প্রভাতী ট্রেন সকাল পৌনে ৮ টায় ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে এবং তা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় দুপুর ২.৫০ মিনিটে।
তূর্ণা এক্সপ্রেস: এই ট্রেনটি ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে রাত ১১.৩০ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় পরেরদিন ভোর ৬.২০ মিনিটে।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস: সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৭.০০ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় দুপুর সোয়া ১২ টায়।
চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন: চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে দুপুর ১.০০ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় রাত ৮ টায়।
কর্ণফুলি এক্সপ্রেস: ট্রেনটি ঢাকা ছাড়ে সকাল ৮.৪৫ মিনিটে এবং পুনরায় চট্টগ্রাম পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে।
চট্টলা এক্সপ্রেস: চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে দুপুর ১.০০ মিনিটে এবং তা চট্টগ্রামে পৌঁছায় ৮.৩০ মিনিটে।
ইতি কথা
যারা ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী হতে চান আশা করি তাদের জন্যে আমাদের আজকের এই এক আর্টিকেলই যথেষ্ট! সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে পরবর্তী ট্রেন জার্নিটিকে আরো অর্থবহ করে তুলুন। হ্যাপি ট্রেন জার্নি!