ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান (DhakaTourist Spot) সমূহের তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!
ঢাকার দর্শনীয় স্থান : রূপবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্য সব জায়গার মতো ঢাকায় তেমন প্রাকৃতিক সুন্দর্য পরিলক্ষিত হয় না। চলুন দেখে নি ঢাকার সেরা দর্শনীয় স্থান গুলোর সম্পূর্ণ তালিকা ও ইতিহাস সহ বিস্তারিত।
ঢাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ – Dhaka Tourist Spot
নন্দন পার্ক
যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তি সহায়তা এবং মনোমুগ্ধকর ডিজাইন নিয়ে ভারতের নিকো পার্ক রিসোর্ট এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক সহায়তায় তৈরি হয় এই পার্কটি। ৩৩ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে সবুজে ঘেরা মনোরম এই পার্কটি। নন্দন পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি রাইডের অপূর্ব সমন্বয়। ঢাকার দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত এই পার্কটি দেশের প্রথম ৫ডি সিনেমা থিয়েটার এবং ৩৬০ ডিগ্রি ভার্চুয়াল মুভি থিয়েটার চালু করে। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে কেভ ট্রেন, মিনি ক্রারোসলি ফ্লাই গো রাউন্ড, ইত্যাদি রাইড। তাছাড়া ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে রয়েছে মোট ২৭টি রাইড। এই পার্কের রাইডগুলোর তালিকায় রয়েছে মুন রেকার, রক ক্লাইমরিং, ওয়াটার কোস্টার, কেবল কার, বাম্পার কার, কাটারপিলার, আইসল্যান্ড, প্যাডেল বোট, রিপলিং, জিপ স্লাইড, নেট-এ-বল ইত্যাদি।
নান্দনিক এই পার্কের প্রবেশ মূল্য ৯০ টাকা। পার্কে প্রবেশ মূল্য এবং ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সমস্ত রাইড ব্যবহার ফি ২৫০ টাকা। মনে রাখবেন, ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের রাইড ব্যবহার বাদে ১২০ সেমির উপর উচ্চতা সম্পন্নদের পার্কে প্রবেশ এবং সব রাইডের ফি ১৫০ টাকা। ১৫০ সেমির নিচে উচ্চতা সম্পন্নদের পার্কে প্রবেশ এবং সব রাইড ২০০ টাকা এবং ৮০ সেমির নিচে যাদের উচ্চতা তাদের কোন ফি প্রদান করতে হয় না। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবারে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পার্কটি। তবে শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ ট পর্যন্ত খোলা পাবেন এই পার্কটি।
লালবাগ কেল্লা
আমরা বাঙালিরা হলাম ভ্রমণবিলাসী। আমরা অনেকেই ভ্রমণের তাড়নায় ঘুরে বেড়াই দেশ-বিদেশে; কিন্তু সত্যি বলতে নিজের দেশের অনেক জায়গাই আমরা ঘুরে দেখি না। আমরা অনেকেই জানি না আমাদের ব্যস্ত এই নগরীতেই লুকিয়ে আছে কত শত ঐতিহাসিক স্থান। আজ আপনাদেরকে ঢাকার তেমনি এক ঐতিহ্যবাহী স্থানের অপরুপ রূপের বর্ণনা দিব। যে ঐতিহ্যবাহী স্থানের কথা বলছিলাম সেটি হচ্ছে লালবাগ কেল্লা। লালবাগ কেল্লা মোগল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই স্থাপনায় একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙ-বেরঙের টালি। এই স্থানটি ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রণ আপনি দেখতে পাবেন না।
তিনশ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আছে এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গটি । লালবাগ কেল্লায় আপনার চোখে পড়বে দরবার হল এবং হাম্মামখানা,। এছাড়া ও উত্তর-পশ্চিমাংশে দেখতে পাবেন শাহি মসজিদ। ঢাকার মধ্যে এত পুরোনো মসজিদ খুব কমই আছে। লালবাগ কেল্লার দরবার হল এবং হাম্মামখানাটি বর্তমানে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। মূলত এটি পূর্বে শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ছিল। এই জাদুঘরে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। এই জাদুঘরে আপনার চোখে পড়বে মোগল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবি। এই ছবিগুলো দেখলে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। জাদুঘরে আরো দেখতে পাবেন মোগল আমলের বিভিন্ন মৃৎশিল্প, কার্পেট, হস্তলিপি এবং রাজকীয় ফরমান। এই জাদুঘরে শায়েস্তা খাঁর ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্রও দেখতে পাবেন।
লালবাগ কেল্লায় এছাড়া ও রয়েছে তৎকালীন বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক এবং সে সময়কার প্রচলিত মুদ্রা । সত্যি বলতে তিনশ বছরের পুরোনো স্থাপনা ও সে সময়ের সম্রাটের ব্যবহৃত নানা জিনিস দেখতে পারাটা সৌভাগ্যের এবং সে সঙ্গে বিস্ময়েরও বটে। লালবাগ কেল্লায় সম্রাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখতে দেখতে আপনিও হারিয়ে যাবেন মোগল শাসকদের আমলে। লালবাগ কেল্লায় পাতাবাহার আর ঝাউগাছের আপূর্ব সারির সাথে আরো দেখতে পাবেন রঙ্গন, গোলাপ, গাদাসহ রকমারি সব ফুলের গাছ। লালবাগ কেল্লা গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সরকারি ছুটির দিন লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে। তাছাড়া ও সোমবার অর্ধদিবস এই কেল্লাটি বন্ধ থাকে।
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল মূলত ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নবাব পরিবারের বাসভবন ছিল। অপরুপ এই ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। মাত্র ২০ টাকায় টিকেট কেটে ঢুকলেই এই মঞ্জিলে চোখে পড়বে বিশাল উদ্যান। অনেক রকমের ফুলগাছ, নারিকেল আর সুপারিগাছে ভরা অপরুপ এই সবুজ অঙ্গন। সামনে পথ চলতে চলতে প্রাচীন প্রাসাদ মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে এক কল্পনার রাজ্যে। ১৮৭২ সালে নবাব আবদুল গনি কতৃক নতুন করে নির্মিত এই মঞ্জিলটি তাঁর ছেলে খাজা আহসানউল্লাহর নামেই মূলত আহসান মঞ্জিল নামে নামকরণ করা হয়।
মূলত আহসান মঞ্জিল একটি দোতলা ভবন। এর বারান্দা এবং মেঝে মার্বেল পাথরে তৈরি। এই প্রাসাদের উত্তরদিকে সুবিস্তৃত লাইব্রেরি পূর্বদিকে বড় খাবার ঘর পশ্চিমে জলসাঘর। দোতলায় উঠলে দেখবেন বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার আর তিনটি মেহমান কক্ষ। পশ্চিম দিকে আছে নাচঘর এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন প্রায় চার হাজার সাতটি। আহসান মঞ্জিলের বিভিন্ন গ্যালারি তে চোখে পড়বে বড় লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারি সহ নবাবদের আমলের বিভিন্ন নিদর্শন। এছাড়া ও এখানে আছে বড় বড় আলমারি, তৈজসপত্র যা নবাবের আমলের নিদর্শন। এছাড়া ও আহসান মঞ্জিলে দেখতে পাবেন বরেণ্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রতিকৃতি। স্যার সলিমুল্লাহ স্মরণে এবং নবাবদের সমসাময়িক মনীষীদের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে আহসান মঞ্জিলের বিভিন্ন গ্যালারি।
আহসান মঞ্জিলে যেতে হলে ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে গুলিস্তান এসে নর্থ সাউথ রোড ধরে কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে নয়াবাজার মোড়। নয়াবাজার মোড় থেকে বাবুবাজারের দিকে যেতে থাকবেন। বাবুবাজার ব্রিজের বামপাশে আরেকটি মোড় দেখবেন। এই মোড়ের বামপাশেই ইসলামপুর। ইসলামপুর এসে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে আহসান মঞ্জিল যাওয়ার রাস্তা। বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে এই পর্যটন স্পট টি।
জাতীয় জাদুঘর
ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন স্পট হল জাতীয় জাদুঘর। কেবল বাংলাদেশ নয় বরং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ জাদুঘর হল এটি। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই জাদুঘর টি স্থাপিত হয়েছে। চারতলা এই ভবনের স্থাপত্য নকশা অত্যন্ত নজরকাড়া। ২০ হাজার বর্গমিটারের এই ভবনটির ৪৬টি গ্যালারিতে রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন! টিকেট কেটে জাদুঘরে ডুকতেই ভবনের প্রবেশদ্বারে দেখবেন সুসজ্জিত দুটি কামান। এবার চলুন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই জাদুঘরের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে জেনে নিই।
এই জাদুঘরের প্রথম তলাটি যেন পুরো বাংলাদেশের একটি ছোট সংস্করণ। এখানে দেখতে পাবেন সুন্দরবন, উপজাতীদের জীবনধারা, খনিজ শিলা, ভাস্কর্য, মুদ্রা এবং প্রাচীন যুগের নানাবিধ ভাস্কর্যের। জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় দেখতে পাবেন বাংলাদেশের সভ্যতা ও ইতিহাসের ক্রমবিবর্তন। নানান রকম ঐতিহ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই তলাটি। এখানে দেখতে পাবেন বিভিন্ন সময়ের অস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, চীনামাটির হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প সহ নানান নিদর্শন। জাদুঘরের তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তির প্রতিকৃতি এবং চিত্রকর্ম সেই সাথে বিশ্বসভ্যতার নানান নিদর্শন।
কীভাবে যাবেন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং এবং ঢাকার দর্শনীয় এই স্থানে। জাতীয় জাদুঘর শাহবাগ এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। ঢাকা থেকে শাহবাগ রুটের যেকোনো বাসে করে চলে আসতে পারেন এখানে। এখানকার টিকেটের মূল্য খুবই কম। যেখানে টিকেটের মূল্য ৩ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য পাঁচ টাকা, ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ৭৫ টাকা।
এতক্ষণ জেনে নিলাম ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে কোন কোন জায়গা গুলোতে না গেলেই নয়। যে ঢাকা শহর আপনার কাছে কেবল দূষন আর যানজট নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল আজ সেই ঢাকা শহরের পর্যটন স্পটের কথা আপনাদের জানালাম। গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান (Gazipur Tourist Spot) সমূহের তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!