জেনে নিন জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি | পরিচিতি | ইতিহাস | স্টপেজ | টিকিটমূল্য এবং সুযোগ-সুবিধা!
ট্রেন ভ্রমণ অনেকের কাছে বেশ উপভোগ্য মনে হলেও সার্ভিসের মানের কারণে তা আবার অনেকের কাছে পানসে মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত বেশ কিছু ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা রয়েছে, যেসব ট্রেনের সার্ভিস কোয়ালিটি নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন উঠেনি বা উঠার সুযোগ হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশে বহু বছর আগে থেকেই আজ পর্যন্ত টিকে আছে এমন ট্রেনের সংখ্যাও যথেষ্ট কম নয়! যাইহোক! উপরোক্ত সকল কনসেপ্ট এবং তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ট্রেন এবং তার সার্ভিস নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। যেখানে থাকছে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি, স্টপেজ, টিকিট মূল্যসহ অন্যান্য তথ্য।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচিতি
১৩ মে ১৯৮৬ অর্থ্যাৎ ৩৬ বছর আগেই শুরু হয়েছিলো এই জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস যাত্রা৷ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এটি বেশ পুরোনো একটি ট্রেন এক্সপ্রেস। যাইহোক! ঢাকা থেকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত মূলত চলছে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস প্রদান কার্যক্রম।
বর্তমানে বাংলাদেশে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন নং ৭১৭ বা ৭১৮ হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে৷ বাংলাদেশে যে’কটি বিলাসবহুল ট্রেন সম্পর্কে একেবারে না বললেই নয়, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন সে-সব ট্রেনের মাঝে এগিয়ে থাকা বেশ জনপ্রিয় একটি ট্রেন। শুধু বিলাসবহুলই নয়! বরং এই ট্রেনটি একইসাথে বেশ দ্রুত যাত্রী পরিবহনেও সক্ষম। বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন৷
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্যক্রম
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে যারা বিস্তারিত তথ্য জানতে আগ্রহী তারা চাইলে শুরুতে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন৷ ট্রেনটির প্রধান কার্যক্রম হলো ঢাকা-সিলেট রুটে বেশ মানসম্মত সার্ভিস প্রদান করা। তবে যারা এই রুটে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস গ্রহণে অনিচ্ছুক তারা চাইলে পারাবত এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনেরও সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। কারণ একই রুটে এসব ট্রেনও যথেষ্ট ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে।
সপ্তাহে ৬ দিন বেশ প্রশংসার সাথেই জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভির পরিচালিত হয়ে থাকে৷ এক্ষেত্রে যাত্রাপথে ট্রেনটি নিয়মিত পাড়ি দেয় প্রায় ৩১৯ কিলোমিটার বা ১৯৮ মাইল পথ। পাশাপাশি চলতিপথে প্রায় ১৪টির মতো স্টপেজে ট্রেনটি থামে। যারা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস নিতে চান তারা ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে একেবারে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন রুটে ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন৷
বর্তমানে ট্রেনটি পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ান পিটি ইনকা রেক বা কোচ। ১৪ টি মানসম্মত বগির চমৎকার এই ট্রেনটি সপ্তাহে ১ দিন অফ থাকে। তাছাড়া এতে ট্র্যাকগ্যাজ হিসাবে ব্যবহৃত হয় মিটারগেজ। রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-এর শাসনামলে যাত্রা শুরু করা এই ট্রেনটি আজো বেশ জনপ্রিয়তার সাথে সার্ভিস প্রদান করে চলেছে।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকেশন
এবার আসি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকেশনের ব্যাপারে। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঠিক লোকেশন হলো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। তাছাড়া এর দায়িত্ব পালনে কাজ করছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কতৃপক্ষ। যদিও এর সার্ভিস টাইপ হলো আন্তঃনগর ট্রেন রুটে যাত্রী পরিবহন করা।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ এবং সময়সূচি
চলে এলাম আর্টিকেলের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ অর্থ্যাৎ জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ এবং সময়সূচি সম্পর্কিত অংশে। এ-সম্পর্কিত সঠিক তথ্যাবলি জানতে নিচের পয়েন্টগুলিতে ফোকাস করুন:
বিমান বন্দর স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১১ঃ৪২ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৭ঃ৫৭ মিনিটে
আশুগঞ্জ স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৩ঃ০১ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৬ঃ৩৮ মিনিটে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৩ঃ২০ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৬ঃ১৯ মিনিটে
আজমপুর স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৩ঃ৫২ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৫ঃ৫৫ মিনিটে
মুকুন্দপুর স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৪ঃ১০ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৫ঃ৩৮ মিনিটে
হরষপুর স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৪ঃ২৫ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৫ঃ২৫ মিনিটে
মনতলা স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৪ঃ৩৮ মিনেট এবং সিলেট থেকে থামে ১৫ঃ১২ মিনিটে
নোয়াপাড়া স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৪ঃ৫৫ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৪ঃ৪৮ মিনিটে
শাহজীবাজার স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৫ঃ১০ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৪ঃ২৮ মিনিটে
শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৫ঃ২৭ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৪ঃ১৩ মিনিটে
শ্রীমঙ্গল স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৬ঃ১০ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৩ঃ০৩ মিনিটে
ভানুগাছ স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৬ঃ৩৩ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১৩ঃ০৮ মিনিটে
কুলাউড়া স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৭ঃ২৭ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১২ঃ৩২ মিনিটে
মাইজগাঁও স্টেশনে ঢাকা থেকে আসাকালীন সময়ে থামে ১৮ঃ০০ মিনিটে এবং সিলেট থেকে থামে ১১ঃ৫৫ মিনিটে
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট
বাংলাদেশে যে’কটি ট্রেন বর্তমানে সার্ভিস দিয়ে আসছে প্রতিটি ট্রেনেরই রয়েছে আলাদা আলাদা সিট ক্যাটাগরি। আপনি যদি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস গ্রহণ করতে চান সেক্ষেত্রে ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে আপনি কোন সিটের সার্ভিস উপভোগ করতে চান তার উপর। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট লিষ্ট সম্পর্কে। লিষ্টটি হলো:
- শোভন চেয়ার সিট
- এসি সিট
- এবং সবশেষে প্রথম সিট
এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো দাম এবং সার্ভিসের কোয়ালিটির দিক দিয়ে এসি সিটের ভাড়া বা টিকিট মূল্য তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। যদিও যারা এসি সিট ছাড়া কমফোর্ট ফিল করেন না তাদের কাছে এই নির্ধারিত প্রাইজ কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচির পাশাপাশি এর টিকিট প্রাইজ সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট: জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া
যারা ইতিমধ্যেই জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস উপভোগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তাদের উচিত টিকিট প্রাইজ সম্পর্কে ধারণা রাখা। এখানে আপনি মিডিয়াম, কিছুটা হাই এবং সর্বোচ্চ হাই কোয়ালিটির সিট অর্থ্যাৎ এসি সিট উপভোগের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে এসি সিটের সার্ভিস উপভোগ করতে হলে আপনাকে সর্বোচ্চ টিকিট প্রাইজ পে করতে হবে। তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মাথায় রাখার মতো তথ্য হলো প্রতি টিকিট সেল করার সময় প্রাইজের পরিমাণের সাথে ১৫% ভ্যাট যোগ করা থাকে। সুতরাং এই এমাউন্টটি আলাদা করে পে করবার প্রয়োজন পড়ে না। যাইহোক জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট সম্পর্কে জানতে নিচের লিষ্টটি ফোকাস করুন:
- শোভন চেয়ার সিটের দাম ২৯৫ টাকা
- প্রথম সিটের দাম ৩৯৫ টাকা
- এসি সিটের দাম ৬৭৯ টাকা
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি
আপনারা হয়তো এখনো পর্যন্ত জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে জানতে না পেরে হতাশ। কোনো সমস্যা নেই এতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঠিক সময়সূচি সম্পর্কে। ১২ঃ১৫ মিনিটে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ঢাকা টু সিলেট যাত্রা শুরু হয় এবং সেই যাত্রা শেষ হয় ১৯ঃ০০ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি সিলেট টু ঢাকা পথে যাত্রা শুরু হয় ১১ঃ১৫ মিনিটে এবং সেই যাত্রা শেষ হয় ১৮ঃ২৫ মিনিটে।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের বন্ধের দিন
শুরুতেই বলেছি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের বন্ধের দিন হিসাবে সপ্তাহের ১ টি দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখানে মজার ব্যাপার হলো দুই রুটে যাত্রী পরিবহনে সপ্তাহের ২ টি দিনকে বন্ধের দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের কমলাপুর টু সিলেট রুটের পরিবহন ব্যবস্থা মঙ্গলবারে ও কমলাপুর টু সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পরিবহন ব্যবস্থা বৃহস্পতিবারে বন্ধ থাকে। সুতরাং টিকিট কেনার আগে কিংবা প্ল্যানিং করার আগে এই ব্যাপারটিকে মাথায় রাখতে পারেন।
ইতি কথা
জেনে নিলেন তো জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে! এবারে প্ল্যান সেরে ট্রেন ভ্রমণের মিশনে নামার পালা। তাছাড়া দরকারি যাতায়াতের ক্ষেত্রেও এই ট্রেনের সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। যাদের ট্রেন ভ্রমণ নিয়ে সার্ভিসের মানের দিক দিয়ে বেশ বাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা চাইলে এই জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সার্ভিস ট্রাই করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে। তাছাড়া যেহেতু ভাড়ার পরিমাণও হাতের নাগালে সেহেতু বাজেটজনিত কোনো সমস্যাও পোহানোর প্রয়োজন পড়বে না। ১৩ই মে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে উদ্ভোদন করা ট্রেনটি আজো মানসম্মত সার্ভিস দিয়ে সকলের মন জয় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে! এই পথটুকু যেনো আরো সুদীর্ঘ হয়!