খৈয়াছড়া ঝর্ণা ট্যুরিস্ট গাইড । যেভাবে যাবেন, যেখানে থাকবেন বিস্তারিত তথ্য জানুন!
খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপায় : ঝর্ণাপ্রেমীদের জন্যই মূলত আমাদের আজকের এই ট্যুরিস্ট গাইডলাইন। যারা ঝর্ণার অবিরাম স্রোতধারা আর নয়নাভিরাম দৃশ্যে নিজেদের দুঃখ-অবসাদ হারিয়ে শান্তি খুঁজে পেতে চান তাদের প্রথম চয়েজ হতে পারে খৈয়াছড়া ঝর্ণা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সুন্দর ঝর্ণা তালিকায় সবচেয়ে উপরে থাকা এই ঝর্ণা সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং জানতে থাকুন খৈয়াছড়া ঝর্ণা পরিচিত, খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর অবস্থান, খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর পেছনের গল্প, খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর সৌন্দর্যসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা – Khoiyachora Waterfall
খৈয়াছড়া ঝর্ণা পরিচিতি
শুরুতেই খৈয়াছড়া ঝর্ণা পরিচিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এতে করে এই ঝর্ণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং পরবর্তীতে ট্যুর প্ল্যানিং করতে কিছুটা সহজ হবে।
মূলত চট্টগ্রামের বেশ জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা হলো এই খৈয়াছড়া ঝর্ণা। পাহাড়ে গোড়া থেকে সৃষ্ট এই ঝর্ণা প্রথম দেখায় যেকাউকেই ঘায়েল করতে সক্ষম! যেহেতু খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই এই ঝর্ণার সৃষ্টি সেহেতু এই ঝর্ণারও নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। এছাড়াও বাংলাদেশের ‘ঝর্ণা রানী’ হিসেবেও এই ঝর্ণার অধিক পরিচিতি রয়েছে। অনেকেই আবার ঝর্ণাটিকে ঝর্ণাটির মূল নাম ছাড়াই কেবল ঝর্ণা রানী হিসেবেও চিনে থাকেন। চিনবেনই না বা কেনো! সৌন্দর্যের দিক দিয়ে অন্য কোনো ঝর্ণার সাথেই তুলনা চলে না এই ঝর্ণার।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর অবস্থান
এবার আসি খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর অবস্থান এর ব্যাপারে। আগেই বলেছি এটি চট্টগ্রামের বিখ্যাত এটি ঝর্ণা। যা সারাদেশে সৌন্দর্যময় ঝর্ণাগুলির মধ্যে সবার আগে এগিয়ে রয়েছে। মূলত চট্টগ্রামের মিরসরাই পাহাড়ে অবস্থিত এই খৈয়াছড়া ঝর্ণা নামক পর্যটন স্থানটি। যা মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত।
এছাড়াও বড়তাকিয়া বাজার থেকে এই ঝর্ণার দূরত্ব মাত্র ৫ কি. মি. এর মতো। মোটামুটি এই ঝর্ণা সরাসরি উপভোগ করতে যেতে হলে মীরসরাই এবং বড়তাকিয়া বাজার…দুটি নাম মনে রাখলেই হবে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর পেছনের গল্প
আপনি কি খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর পেছনের গল্প সম্পর্কে জানেন? যদিও এর সঠিক ইতিহাস ঠিক কোনটা তা এখনো পর্যন্ত কেউই ঠিকঠাকভাবে বলতে পারেনি।
তবে ধারণা ভিত্তিতে এই ঝর্ণাকে প্রায় ৫০ বছরের পুরো ঝর্ণা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। অর্থ্যাৎ এই ধারণা ভিত্তিতে মনে করা হয় আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে থেকেই এই ঝর্ণা খৈয়াছড়া পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হচ্ছে।
খৈয়াছড়া পাহাড়টি আগে পুরোপুরি জনমানবহীন ছিলো। বসতি তো দূরে থাক এই পাহাড়ে প্রয়োজন ছাড়া কেউই যাওয়ার সাহস করতো না। যার ফলে এই ঝর্ণা সম্পর্কেও মানুষের পক্ষে জানতে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন পড়েছিলো। এটির অবস্থান আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বেশি সময় লেগেছে শুধুমাত্র এর পাহাড়টির ভয়ংকর জংলী পরিবেশ! পরবর্তীতে একটা সময় পাহাড়ি ঢলের ফলে তৈরি হয় এই খৈয়াছড়া ঝর্ণা নামক ঝর্ণাটি।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর সৌন্দর্য
সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এক কথায় অনন্য এই খৈয়াছড়া ঝর্ণা। যা সরাসরি উপভোগ করতে হলে আপনাকে ঝর্ণাটিতে ঘুরে আসতে হবে। তবে আমাদের এই আর্টিকেলটি যেহেতু একটি ভ্রমণ গাইডলাইন বিষয়ক আর্টিকেল সেহেতু অবশ্যই ঝর্ণাটির সৌন্দর্য সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দিতে প্রস্তুত!
এই খৈয়াছড়া ঝর্ণা চট্টগ্রাম বিভাগের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার মূল কারণ হলো এর সৌন্দর্য! পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে খৈয়াছড়া আসার পথে যে দুর্গম পাহাড়ি পথ দিতে হয় সেই পথের সুবাদেও অনেককিছুই উপভোগ করা সম্ভব হয়। মূলত সুবিশাল ঝর্ণা আর পাহাড়ের সম্মিলিত রুপ একসাথে উপভোগ করার ক্ষেত্রে খৈয়াছড়া ঝর্ণা হতে পারফেক্ট অপশন।
মূলত ৩ টি স্তরে বিভক্ত এই ঝর্ণা। যার প্রতিটি স্তরের পরিমাপ যথাক্রমে ৬০ ফিট, ৪০ ফিট এবং প্রায় ১২০ ফিটের মতো। পুরো ঝর্ণাটির চারপাশে একটি মনোমুগ্ধকর ট্রেইল থাকায় সারাদিনের ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে এই ঝর্ণার কোনো বিকল্প নেই।
বেশ জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হওয়ায় এই স্থানটিতে প্রচুর দর্শনার্থী চোখে পড়বে। তাছাড়া ঝর্ণার যে গতি সেটিও কিন্তু মারাত্মক! সবকিছু মিলিয়ে একটু বাড়তি সংযোজন রয়েছে এই ঝর্ণায়। সে কারণেই হয়তো এই ঝর্ণাকে “ঝর্ণার রাণী” বলতেও কেউই দ্বিধাবোধ করেন না! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মূল ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের ৯৫ শতাংশ তৃপ্তি নিয়ে তবেই ফেরৎ যায়! সুতরাং এতদূর পাড়ি দিয়ে আফসোস করার মতো কোনো পরিস্থিতিতেই কাউকে পড়তে হয়নি এবং ভবিষ্যতেও তা হবে না।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপায়
যেভাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাবেন
খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণ খরচ : যারা ইতিমধ্যেই খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তারা জেনে নিন খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপায় । এই পর্যটন স্থানটিতে পৌঁছানো যায় সে-সম্পর্কে। যারা ঢাকা থেকে এবং বাসে করে যেতে চান তারা ঢাকার ফকিরাপুল/ সায়েদাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, গ্রিন লাইন যেকোনো বাসে করে ৫৫০-১৫০০ টাকায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পৌঁছে যাবেন।
এবার বড়তাকিয়া বাজারে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে থেকে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার ভেতরে যেতে হবে খৈয়াছড়া ঝিরির কাছাকাছি স্থানে। এরপর ঝিরিপথ থেকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। এক্ষেত্রে যারা হাঁটতে চান না তারা সিএনজির সাহায্য নিতে পারেন। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় ভ্রমণটিকে পুরোপুরি উপভোগ্য করে তুলতে ৫০০-৬০০ টাকায় একজন গাইডের সাহায্য নিতে পারলে!
Khoiyachora Waterfall Location
খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে যেখানে রাত্রিযাপন করবেন
মূলত খৈয়াছড়া বা বড়তাকিয়া বাজারে রাত কাটানোর মতো কোনো হোটেল না থাকায় এখানে থাকার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে মীরসরাই, ফেনী, সীতাকুণ্ড অথবা চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো দামি, মিডিয়াম কিংবা কম দামী হোটেলে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারেন। মুরাদ বোডিং, সাগরিকা বোডিং, তৃপ্তি আবাসিক হোটেল, হোটেল সাইমুন ইত্যাদি হোটেলে আজকাল বেশ ভালো সার্ভিস পাওয়া যায়। সুতরাং কয়েকদিন থাকার প্ল্যান থাকলে এসব হোটেলেই থাকা শুরু করতে পারেন।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করবেন
খাওয়া-দাওয়া ছাড়া কি কোনো ভ্রমণ আসলেই জমে? মোটেও জমে না! সুতরাং প্রতিটি ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে ভ্রমণের পাশাপাশি খাবার-দাবারের প্রতি বাড়তি ঝোঁক থাকে। এক্ষেত্রে খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে গিয়ে বড়তাকিয়া বাজার হতে কিছু হালকা নাস্তা এবং পানি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়াও ঝিরিপথের শুরুতেই স্থাপিত বেশকিছু খাবারের হোটেলে ১৩০-১৫০ টাকায় বেশ ভালো মানের দুপুরের খাবার পেয়ে যাবেন।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের বাড়তি টিপস
যেকোনো ঝর্ণায় ঘুরতে গেলে বাড়ি সতর্কতার প্রয়োজন! এক্ষেত্রে কিভাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণকে আরো অর্থবহ এবং নিরাপদ করে তোলা যায় সে-সম্পর্কে টিপস জানা থাকলে তা কার্যকর করা সহজ হয়। চলুন তবে এই পর্যায়ে খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের কিছু বাড়তি টিপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক!
- ভ্রমণে যাওয়ার সময় গাড়ি বা বাসে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করুন
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিরাপদে রাখার চেষ্টা করুন
- ঝর্ণার খুব কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না
- শিশুদের দেখেশুনে রাখুন
- খাবার গ্রহণের আগে তা নিরাপদ কিনা তা যাচাই-বাছাই করে দেখুন
- ঝর্ণা ঘুরতে গেলে সবসময় ভারী ব্যাগ ইগনোর করাই ভালো
- ভালো গ্রিপের জুতো ছাড়া ঝর্ণা সরাসরি উপভোগ করতে গেলে এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে যাওয়ার সময় যথাসম্ভব কাপড়ের জুতা পরিহার করে চলুন
- যেকোনো ভ্রমণে সাথে করে হালকা নাস্তা এবং পানি নিয়ে যাওয়াটাই উত্তম
- ঝিরিপথে লম্বা পথ হাঁটার ক্ষেত্রে বয়স্ক এবং শিশুদের বাড়তি যত্ন নিন
- ঝর্ণা সরাসরি উপভোগ করতে সাথে করে চিকন বাঁশের লাঠিও নিয়ে নিতে পারেন
আশা করি উপরের টিপসগুলি ফলো করলে আপনার পরবর্তী খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণ নিরাপত্তা এবং উপভোগের দিক দিয়ে শতভাগ পার্ফেক্ট হয়ে উঠবে।
ইতি কথা
খৈয়াছড়া ঝর্ণা মানেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজে নেওয়ার মতো একটি প্রাকৃতিক স্থান। এই অপরুপ সৌন্দর্যের খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যারা এখনো ভ্রমণ করেননি তারা আর দেরি করবেন না! আজই প্ল্যান করে ফেলুন পরবর্তী ভ্রমণের। আশা করি এই খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণ আপনাকে আরো প্রানবন্ত করে তুলবে।